আমরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা, টেকনিক্যাল শিক্ষা, ইংলিশ মিডিয়াম, কওমি ও সাধারণ শিক্ষা ধারাসহ ভিন্ন ভিন্ন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সাধারণ শিক্ষা আবার দুই ধারায় বিভক্ত। ইংলিশ ভার্সন ও বাংলা ভার্সন। শিক্ষার সব ধারায়ই কিছু আবশ্যিক দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই আবশ্যিক দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না। সরকার আবশ্যিক দক্ষতা উন্নয়ন এবং সব ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় দক্ষতা নিশ্চিত ও যাচাইয়ের জন্য একটি ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিার (১৬ জুলাই) ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষ্যে ড্যাফোডিল পরিবার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)-এর যৌথ আয়োজনে “কোভিড-১৯ এবং তার পরবর্তী সময়ের প্রতিযোগিতামূলক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় আমরা কি প্রস্তুত?” শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথাগুলো বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির আগেও আমাদের দক্ষতার চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্চ একটু একটু করে মোকাবেলা করছিলাম। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এসে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা কতটুকু। বলতে দ্বীধা নেই যে, আমরা অনেক বেশি সক্ষম। আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটাই প্রমাণ করে যে কোভিড উত্তর সময়েও আমরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সব সময় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। আমাদের বড় বড় সব অর্জন তরুণদের হাত ধরে এসেছে। সুতরাং তরুণরা এই সংকটও সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞানার্জন করা। পাশাপাশি জীবিকার যে দক্ষতা প্রয়োজন সেটি অর্জন করা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় করতে পারছে কিনা সে ব্যাপারে আমাদেরকে আরও নজর দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর, ডিরেক্টরেট অব টেকনিক্যাল এডুকেশনের মহাপরিচালক মো. সানোয়ার হোসেন, ্এ টু আই প্রকল্পের ফিউচার অব ওয়ার্ক ল্যাবের প্রধান আসাদ উজ জামান, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং প্রথম আলোর যুব প্রকল্প কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসান। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএসডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক কেএম হাসান রিপন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, আমরা সব শিক্ষার্থীকে একই শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করছি। এটা ভুল। কারণ সবার দক্ষতা একরকম নয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তার দক্ষতা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা উচিত। কে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করবে, কে টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করবে আর কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করবে তা নির্ধারণ করা উচিত দক্ষতা বিবেচনা করে।
এসময় তিনি সামাজিক ট্যাবু ভাঙার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, আমাদের সমাজে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে ট্যাবু রয়েছে। এ ধরনের শিক্ষাকে সম্মানের চোখে দেখা হয় না। ফলে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জন করতে যায়। সবাই বিবিএস ক্যাডার হতে চায়। এই ট্যাবু ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. নাসির উদ্দিন বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে শতকরা ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। করোনা মহামারির সময়ে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষার আওতায় আনার চেষ্টা করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের শতবর্ষী ১৩টি কলেজ ও ৮টি মডেল কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান চলছে।
এছাড়াও ১৭ হাজার ভিডিও লেকচার তৈরির কাজ চলছে বলে জানান ড. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, এসব লেকচার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকবে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে এসব ক্লাস দেখতে পারবেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরবে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের কথাও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভাবছে বলে জানান ড. নাসির উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমাদেও অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের প্রচুর দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য এখনই নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান আরও বলেন, কোভিড-উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের যেসব দক্ষতা প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে লিডারশিপ, দূরদর্শিতা, ইনোভেশন, ব্যবস্থাপনা, কৌশল ইত্যাদি। এসব দক্ষতা অর্জন করার জন্য তরুণ প্রজন্মকে এখন থেকেই প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান মোহাম্মদ নূরুজ্জামান।
ক্যাপশনঃ ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষ্যে ড্যাফোডিল পরিবার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)-এর যৌথ আয়োজনে “কোভিড-১৯ এবং তার পরবর্তী সময়ের প্রতিযোগিতামূলক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় আমরা কি প্রস্তুত?” শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, এমপি, ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূরসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply