আমাকে নিয়ে চরম মিথ্যাচার করা হয়েছে, কথিত সিদ্ধান্ত দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী : অজয় ভৌমিক

গতকাল ৭ মার্চ রোববার চাঁদপুরের স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে আমাকে দলের পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদান সংক্রান্ত সংবাদটি আমার দৃষ্টিগোচরে হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আমি নাকি জাতীয়তা গোপন করে অসৎ উপায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্যপদ লাভ করেছি। সে জন্যে আমাকে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগের কথিত ওই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অবৈধ এবং দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমাকে এ বিষয়ে কোন নোটিস করা হয়নি এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির কথিত ওই সভার কোনো নোটিসও করা হয়নি। তাই ঐ সভা যেমনিভাবে অবৈধ, তেমনি আমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটাও তাদের সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত।
একই সাথে বলছি, আমার জাতীয়তা নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার জাতীয়তা নিয়ে চরম মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। শুধু আমিই নই, আমার বাবা প্রয়াত অ্যাডঃ কালী প্রসন্ন ভৌমিকসহ বংশের সকলের জন্ম বাংলাদেশে। আমাদের আদি বাড়ি তথা পৈত্রিক বাড়ি হচ্ছে ফরিদগঞ্জের রূপসা ইউনিয়নের বিশুরবন্দ গ্রামে। আমার জন্ম চাঁদপুর শহরের গনি মডেল উচ্চ বিদ্যারয়ের সামনে আমার দাদু গনি হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত কৈলাশ ভৌমিকের বাসভবনে। আমার কাকা সত্যেন্দ্রনাথ ভৌমিক ছিলেন চাঁদপুর কলেজের তৎকালীন বাংলা বিভাগের প্রধান। আরেক কাকা জিতেন্দ্রনাথ ভৌমিক ছিলেন হরিণা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ১৯৭২ সালে আমি চাঁদপুর মহিলা কলেজের সামনে বাড়ি ক্রয় করে সেখানে আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি। আমার জাতীয় পরিচয় পত্র নং-১৩২২২১২১৫৪২৩২, ঠিকানা : বাসা/হোল্ডিং নং-৪১১/৩৫৭, মহিলা কলেজ রোড, চাঁদপুর পৌরসভা, চাঁদপুর।
আমি প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাই স্কুল তৎকালীন জুবলি স্কুলে পড়াশোনা করি। এরপর দশম শ্রেণীতে এসে ডি.এন উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হই এবং এই স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি পাস করি। ওই সালেই চাঁদপুর কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হই (কমার্স বিভাগে)। এই কলেজ থেকেই আমি ১৯৬৬ সালে আই.কম এবং ১৯৬৯ সালে বি.কম পাস করি। এরপর আমি ঢাকা ল’ কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু আর ল’ কমপ্লিট করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেই। আমি ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ চাঁদপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। আমার আহ্বায়ক ছিলেন রবিউল আউয়াল কিরণ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ফরিদগঞ্জ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলাম। ১৯৭২ সালে চাঁদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার সময়ে সভাপতি ছিলেন রফিউদ্দিন আহমেদ সোনা আখন্দ। একই সময় আমি চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের আমোদ প্রমোদ (সাংস্কৃতিক) সম্পাদক ছিলাম। ১৯৭৩ সালে চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সভাপতি ছিলেন এম সফিউল্লাহ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেনাবাহিনী আমাকে আটক করে। তখন বেশিরভাগ সময় পলাতক অবস্থায় আমাকে দিন কাটাতে হয়। আমি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্বতম কার্যনির্বাহী পরিষদে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।
আমি ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী। যার নং-অঋ৮৩১০৭০২। আমি চাঁদপুর জেলা স্কাউটের বর্তমানে সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। এছাড়া তিনবারের কমিশনার এবং এর আগেও তিনবারের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। ১৯৭২ সালে চাঁদপুর শিল্প পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণ করি। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তথন থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। আমি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চাঁদপুরের তৎকালীন রেডক্রসের সম্পাদক ছিলাম। তখন সভাপতি ছিলেন এম সফিউল্লাহ এমপি। আমি চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীন ক্রিকেট উপ-কমিটির সম্পাদক ছিলাম ৭ বছর। এখনো আমি চাঁদপুরের রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মীয়, ক্রীড়া, স্কাউটসহ নানা জনসেবা ও সৃজনশীল কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আছি।
এখানে যা উল্লেখ করেছি, তা আমার কর্মময় জীবনের খুবই সামান্য। অথচ আমার জাতীয়তা নিয়ে চরম মিথ্যাচার করা হলো। আমি এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম।

শেয়ার করুন

Leave a Reply