ঈদ মূখ্য না জীবন, বেছে নেয়ার দায়িত্ব আপনার

ঈদ মানেই আনন্দ,ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই ভালবাসার মানুষদের সাথে আত্মার সম্মিলন। মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আমাদের দ্বার প্রান্তে। ঈদুল ফিতর এর আমেজের পরপরই শুরু হয়ে যায় ঈদুল আজহার মহাপ্রস্তুতি। কোথায় গরুর হাট বসবে,কে কি কোরবানীর করবে,তা নিয়ে ভাবনা।দেশের বিভিন্ন হাট গুলোতে বিশাল দেহী গরু,উট,ছাগল খাসী, যা খামারীরা সারা বছর তার অর্থ, শ্রম, মেধা ব্যয় করে লালন পালন করে প্রদর্শনী করে নিয়ে আসে হাটে।আমরাও দেখে শুনে সামর্থ অনুসারে কিনে নিয়ে আসি।
গরু কেনা,গরু হাঁটিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার মাঝে নিহিত আনন্দ। পথচারীরা হাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা কত দিয়ে কিনলেন ভাই। বলতে বলতে এক সময় বিরক্ত হয়ে অনেকে গরুর গায়ে এটে দেয় মূল্য এতো টাকা। এ যে নির্ভেজাল আনন্দ।
আমাদের এলাকায় কোরবানীর পশু জবাই করার পর বিলি বন্টনের সুন্দর এক রীতি। কোরবানীর গোসত তিন ভাগের এক ভাগ একটি জায়গায় জড়ো করা হয়। তারপর গ্রামের প্রতি চুলা অনুযায়ী যে কুরবানী দিয়েছে তার ঘরে আর যে দেয়নি তার ঘরেও পাঠিয়ে দেয়া হয়।। এখানেও ভাতৃত্ব বোধের এক অপূর্ব নমুনা আজো বিদ্যমান।
গত বছর মার্চমাস থেকেই করোনা প্রবল আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে।। দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপ অতিক্রম করছে করোনা।। করোনা কেড়ে নিয়েছে আমাদের পেশা,আমাদের আনন্দ উল্লাস সবই। কতো প্রিয়জন, কতো আপনজনকে হারিয়েছি তা হিসাব দেয়া যে বড় ভার।। প্রিয়জন হারানোর শূন্যতা আর হাহাকার আজ সর্বত্র বিরাজমান। এ শূন্যতা পূরন হবার নয়
প্রতিটি সকাল সুখ বার্তা,আনন্দ বার্তা নয়,শোকবার্তা নিয়ে আসছে আমাদের জন্য। বাংলাদেশের সাধারন মানুষ, শ্রমজীবী,পেশা জীবী,ব্যবসায়ী কেউ করোনার প্রবল থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা,করোনা যে চলে যাবে এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেনা। করোনার সাথে খাপ খাইয়ে আমাদের চলতে হবে। করোনার সাথেই আমাদের বসবাস। নিজেকেই পরিকল্পনা নিতে হবে কিভাবে নিজকে নিজের আশেপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে পারবো।
করোনায় আক্রান্ত হয়নি বাংলাদেশে এমন পরিবার নেই বললেই চলে।। যে পরিবারের করোনা সমান্য আঘাত হেনেছে,ঘরে বসে চিকিৎসা নিয়েছে তাদে ব্যয় কমপক্ষে ১০০০০০/ একলক্ষ টাকা – আর যারা বেশী আক্রান্ত তাদের ১৫,০০০০০/- থেকে ২০,০০০০০/- টাকা।
আমরা কি এ খরচ গুলোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।। সব পরিবারের এতো টাকা খরচ করার সামর্থ আছে? হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হলেই ধরিয়ে দিচ্ছে অর্ধলক্ষ টাকার টেষ্ট। আপনাকে ভয় দেখাবে আপনি বাধ্য ছেলের মতো সব করবেন। নতুন করে মানুষের দ্বারে উপস্হিত ডেঙ্গু। চিকনগুনি য়া আবার আসে কিনা কেজানে। করোনা,ডেঙ্গু,চিকনগুনিয়া এ রোগ গুলো থেকে মুক্তির একমাত্র অবলম্বন ব্যক্তি সচেতনতা।। দেখতে হবে আশপাশ পরিস্কার কিনা, ফুলের টব,পুরনো টায়ার, ইত্যাদিতে পানি জমে আছে কিনা , মাক্স পরে বেরুতে হবে,সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ব্যক্তি সচেতন না হলে সমষ্টির সমাধান কখনোই সম্ভব নয়।
আসন্ন কোরবানীর ঈদে কোরবানীর পশু কেনার জন্য অনলাইন ব্যবসা বেশ জমজমাট। গতবার ও কিনেছিলাম গাড়ীতে করে বাসার সামনে দিয়ে গেছে। এবার ও বুকিং দিয়েছি ইনাশাআল্লাহ আসবে।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। আল্লাহর নামে কুরবানীর নিয়্যাতে পশু কিনে যে আপনাকে ঠকাবে আল্লাহ তাকে অন্যভাবে ঠকিয়ে দিবে।
“প্রকৃতির বিচার অনেক কঠিন”
বিভিন্ন টি,ভি চ্যানেল গুলোতে দেখা যাচ্ছে গরু বাজারে প্রচন্ড ভীড়। রীতি নীতি কেউ মানছেনা, মাক্স না পরেই হুমড়ি খেয়ে পরছে।। ঈদ এলেই বাবা,মা ভাই,বোনের ভালবাসা উথলে উঠে। সারা বছর খবর নেই ঈদ গ্রামে করতেই হবে প্রচন্ড ভীড়,ঝক্কি ঝামেলার মাঝে শিশু,বৃদ্ধ সবাইকে নিয়ে ঈদে গ্রামে যেতেই হবে।। গ্রামে যারা আছেন তারাই এদের প্রতিরোধ করুন,এরা ভালবাসার নামে ছড়িয়ে দিবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেকোন সময় আপনার শরীরে।।
করোনা থেকে উঠেছেন,আপনি সুস্হ ভাববার কোন কারন নেই।করোনা পরবর্তী জটিলতা আরো কঠিন।
করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত,হার্ট,ফুসফুস কিডনি,লিভার,হবে ডায়বেটিস,এলার্জি। মুক্তি নেই, মুক্তি আলোয় আলোয়। সে আলো আপনাকেই জ্বালাতে হবে।
দেশের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে,পরিবারের স্বার্থে প্রতিটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটির কাছে বিনীত অনুরোধ আপনিই পারেন আপনার গোটা সমাজকে বদলে দিতে, করোনাকে দূরে সরিয়ে দিতে।
মানবতার জননী আমাদের বাতিঘর প্রিয় নেত্রী, সরকার প্রধান মন্ত্রী ঈদ উপলক্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্হ কর্মহীন মানুষের পাশে আবার ও দাঁড়িয়েছেন। তালিকা করে সবার কাছে ঈদুল আজহার উপহার সামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন সাথে নগদ প্রণোদনার টাকা সবার হাতে। আল্লাহ আপনাকে বাঙ্গালী জাতির হিতার্থে বাঁচিয়ে রাখুন,দীর্ঘ হায়াত দান করুন।।
এ করোনা সময়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত আইনজীবী সমাজ।
কোর্ট নেই,মামলা করা যাচ্ছেনা।বাংলাদেশ বার কাউন্সিল উদ্যোগী হলে নিশ্চয়ই আইনজীবীদের কল্যানে কিছু করা যেতো তবে ভার্চুয়ালী সমগ্র কোর্ট সমূহ খোলা হলেও আইনজীবীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতো। তারপরও ঈদ। ঈদ মোবারক। দেশ বিদেশে অবস্থান রাত সব বন্ধু, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা।।ভাল থাকুন প্রিয়জনেরা।
ভয় ও মনে ঈদ আসছে, মরণও আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কে সেই ডাকে সাড়া দিবেন সে ভাবনা আপনার।।
ঈদ মূখ্য না জীবন?
লেখক পরিচিতিঃ জেসমিন সুলতানা, আইনজীবী বাংলাদেশ, সুপ্রিম কোর্ট

শেয়ার করুন

Leave a Reply