একজন মনিরা আক্তার নারী উদ্যোক্তা, লেখক সংগঠক

মনিরা আক্তার। জন্মগ্রহণ করেছেন ৬ এপ্রিল চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোল্লা গ্রামে। শৈশব কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর বিশালতায়। বাবা আবুল ফজল ছিলেন পেশায় আইনজীবী। মহান ভাষা আন্দোলনে ছিলো সক্রিয় অংশগ্রহণ। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। চাঁদপুরের সামাজিক ও সংস্কৃতিক অঙ্গনে রেখেছেন অনন্য অবদান। মা সালেহা বেগম ছিলেন চাঁদপুর মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত একজন দক্ষ সংগঠক ও সু-গৃহিণী। দেশেকে স্বাধীন করতে বাবা যুদ্ধে চলে গেলে সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মা চার সন্তানকে আগলে রাখেন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে মনিরা আক্তার তৃতীয়। ভাইবোন সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে কলেজ পর্যন্ত চাঁদপুরে ছিলো সরব পদচারণা। ১৯৮২ তে এসএসসি ও ১৯৮৪ তে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৬ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতোকত্তর ডিগ্রী নিয়ে বর্তমানে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শিক্ষাজীবনে গার্লসগাইড, রেডক্রস, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র অবস্থা থেকেই প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ছাত্র রাজনীতির অঙ্গনেও ছিলো তাঁর দৃপ্ত পদচারণা। ৯০এর স্বৈরাচার আন্দোলনে রাজপথে থেকেছেন ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ থেকে রোকেয়া হল সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
লেখালেখির হাতেখড়ি ছাত্রাবস্থা থেকেই। বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু হলেও ঘুরে বেড়ানোর নেশা থেকেই শুরু করেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজ। সেখান থেকেই সমাজ সচেতনতামূলক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও অনুষ্ঠান নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন-সংস্কৃতি-ভাষা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখির অভ্যাস থাকলেও প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণের সুবাদে লেখাকে অভ্যাসে পরিণত করেন। নব্বই এর দশক থেকে আজ অবধি সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত লিখে আসছেন।
২০১৭-১৯ পর্যন্ত নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘রানার’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। ‘নারী শ্রমিকের শ্রম বৈষম্য’ বিষয়ক অনুসন্ধানি রিপোর্ট যা বাংলাদেশ ইন্সিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস্)এর মাসিক জার্নালে নিয়মিত প্রকাশ হয়। ভ্রমণপ্রিয় এ মানুষটি দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত ঘুরে সঞ্চয় করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
কবিতাকে ভালোবেসে তার ভাবকে আবৃত্তির মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দিতে ৮০-৯০ দশক পর্যন্ত চাঁদপুরে আবৃত্তি সংগঠন ‘সাওনিক’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়ে আবৃত্তিচর্চা করে আসছেন। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের নির্বাহি সদস্য ছিলেন। দৈনিক ঢাকার ডাক‘র উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ‘জিগীষা সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক, ত্রৈমাসিক সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা ‘বৈঠা’র সম্পাদক। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘একাত্তরের যাত্রী’র সহ-সভাপতি এবং ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন একাডেমিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ও উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও প্রত্যয়ী মনোভাবের কারণে কোন চাকরিতে না গিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘দৃষ্টি সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান’ ও ‘অপ্সরা ইন্টারন্যশনাল’।
শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে দেশে-বিদেশে শহীদ মিনার নির্মাণের বিধিমালা করার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ ঃ-
প্রবন্ধ: নন্দিত জীবনের সন্ধানে
গল্প: অন্য জীবন
উপন্যাস: দহন
সম্মাননা ঃ-
১) এবি ব্যাংক নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা।
২) ছায়ানীড় প্রকাশনা থেকে সম্মাননা স্বারক প্রদান করে।
মনিরা আক্তারকে দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে পত্রিকার লেখক সুহৃদ হিসেবে সম্মাননা জানাচ্ছে পত্রিকা পরিবার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply