কচুয়ায় ভাঙা ঘরে দুই সন্তানকে নিয়ে আনোয়ারা বেগমের মানবেতর জীবন

কচুয়া প্রতিনিধি :
স্বামী পরিত্যাক্ত আনোয়ারা বেগম। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। প্রায় ২৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে চট্টগ্রামে চলে যান স্বামী করম আলী মিয়া। সে থেকে অন্যের বাড়ি কাজ করে ২ছেলে মেয়েকে আগলে ধরে বড়ো করেছেন আনোয়ারা বেগম। আনোয়ারা বেগম কচুয়া উপজেলার খলাগাঁও গ্রামের করম আলীর স্ত্রী। জীর্ন শীর্ণ ঘরে প্রায় ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রায় ২৫ বছর পূর্বে করম আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার গৃহে রেহেনা আক্তার (২২) ও শাহাদাত হোসেন (২১) নামের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর ছেলে ও মেয়ে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেনি। অভাব ও অন্যান্য কারনে স্বামী করম আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে চট্টগ্রামে চলে যান। পরবর্তীতে আনোয়ারা বেগম দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার বাবার বাড়ি বরুড়া উপজেলার একবাড়িয়া গ্রামে তার গরীবী পিত্রালয় গিয়ে আশেপাশের মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেচেঁ থাকার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে মেয়ে রেহেনা আক্তারকে বিয়ে দেয়া হলেও তারো বেশিদিন স্বামীর সংসার করা ভাগ্যে জুটেনি। চোখে কম দেখায় তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। অর্থ ও সামর্থ্য না থাকায় একমাত্র ছেলে শাহাদাত হোসেনকেও লেখাপড়া করাতে পারেনি। বর্তমানে ভিটে না থাকায় অন্যের ভিটায় কুড়েঘরে বসবাস করছেন তারা।
আনোয়ারা বেগমের পুত্র শাহাদাত হোসেন বলেন,আমার বাবা থেকেও নেই। দীর্ঘ ২৫ বছর বাবা কোনো আমাদের খোজখবর রাখেনি। অর্থ ও সম্পত্তি না থাকায় অন্যের কুড়েঘরে কোনো রকম দিনকাটচ্ছি। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও নানার বাড়ির সহযোগিতা নিয়ে খলাগাঁও গ্রামে চার শতাংশ ভিটির জায়গায় ক্রয় করলেও অর্থের অভাবে ঘর নির্মান করতে পারছি না।
স্থানীয় অধিবাসী যুবলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, আনোয়ারা বেগম আমার বাড়ির প্রতিবেশী হন। তিনি দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একটু বৃষ্টি এলইে তার ঘরের বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের একটি ঘর উপহার দিতে আমি ইউএনও মহোদয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
খলাগাঁও গ্রামের অধিবাসী মো. আব্দুল করিম বলেন, আনোয়ার বেগমের দু:খের যেন শেষ নেই। দু:খের সাথেই তার বসবাস। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একটি সরকারি ঘর পেলে বদলে যাবে তার পরিবারের জীবন।
শাজুলিয়া দরবার শরীফের পীর আবুল হাসান শাহ মুহাম্মদ রুহুল্লাহ শাজুলী বলেন, অভাবী পরিবারটি আমার কাছে এসেছিলেন। শুনেছি আনোয়ারা বেগমের পরিবারটি খুবই নিরীহ। ছেলে ও মেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন তারা।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ণ দাস শুভ বলেন, আমি বিষয়টি শুনে তাৎক্ষনিক পিআইওকে ওই নারীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ সরকারি ঘর দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply