কুমারডুগিতে আ’লীগ নেতা ভুট্টো হত্যা মামলার ৪ আসামী গ্রেফতার

হতার শিকার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টো

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টো হত্যা মামলায় অবশেষে এজহার নামীয় ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন : শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কুমারডুগী এলাকার আঃ লতিফ খানের ছেলে মনসুর খান (৩৮), মৃত শামছুল হক খানের ছেলে মোস্তফা খান কালু (৪৮), ও হান্নান খানের ছেলে সুমন খান (৩৪) ও ইছহাক। আটক প্রথম তিন জন সবাই ভুট্টো খানের একই বাড়ির লোক এবং একজন জামাই।
গ্রেফতারকৃত তিন জনকে মডেল থানার পুলিশ গতকাল ২০ মে ভোর ৫টায় এবং এক জনকে বিকেলে ডিবি পুলিশ কুমারডুগী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
হত্যার শিকার আজিজুর রহমান খান ভুট্টোর স্ত্রী নিলীমা আক্তার রীনা ৫ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়েরের একদিনের মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করলো পুলিশ। এ মামলায় প্রধান আসামী সোহাগ খান।
মামলার তদন্তকারী কমকতা এসআই রাশেদ জানান, এ মামলায় এজহার নামীয় ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং রিমান্ড চাওয়া হবে। তিনি বলেন, আপাতত সম্পতিগত বিরোধই এ হত্যাকান্ডের কারণ দেখা যাচ্ছে। তারপরও আসামীদের রিমান্ডে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সেই সাথে প্রধান আসামী সোহাগ খানকে যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতার করা হবে। মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই হত্যার মোটিভ বের করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান এর নিদেশে মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে পুলিশ। সেই সাথে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিন মামলাটি মনিটরিং করছেন সার্বক্ষণিকভাবে।
গত সোমবার (১৮ মে ) রাত পৌনে ১১টায় বাড়িতে যাওয়ার পথে একদল দুর্বৃত্ত ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টোর উপর হামলা চালিয়ে গলায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। মঙ্গলবার (১৯ মে) পৌনে ৪টায় ভুট্টোর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে ভুট্টোর প্রথম ও দ্বিতীয় জানাযা সম্পন্ন করে মরহুমের নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ বিষয়টি নিয়ে তার বন্ধু ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান পাটওয়ারী জানান, সোমবার বিকেলে তার কুমারডুগীস্থ এলাকায় সারের দোকান থেকে আমিসহ বাকিলা বাজারে যাই। সেখান থেকে তার বাচ্চাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করে মোটরসাইকেল যোগে আসার সময় আমাকে মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নামিয়ে দিয়ে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। আমি বাড়িতে গিয়ে পৌছার কিছুক্ষণ পর ভুট্টোর বাড়ির লিটন নামের এক ব্যক্তি ফোন করেন আমাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত লিটনের কলটি ধরতে পারিনি। এরপরই শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক মোঃ ফারুক বেপারী আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানালে আমি সাথে সাথেই ছুটে আসি।
স্থানীয়রা জানায়, আজিজুর রহমান খান ভুট্টো রাত পৌনে ১১টার সময় বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির কাছেই ওঁত পেতে থাকা কয়েকজন যুবক ভুট্টোর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তার ডাক চিৎকারে স্থানীয় আজমির, অপি, ঝিকু ও মাইনুদ্দিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন ভুট্টোর চাচা সিরাজ খানের পুত্র সোহাগ খান ভুট্টোর গলায় ছুরি চালাচ্ছে। তাদের দেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন সোহাগসহ ওই সংঘবদ্ধ দলের সদস্যরা। কিন্তু খুনিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তাদের রেখে যাওয়া ৪টি মোবাইল ফোন, রড, ছুরি ও ৫ জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়।
এলাকাবাসী থেকে জানা যায়, ভুট্টো খান সব সময় মানুষের সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলতেন। প্রতিবাদী ও স্পষ্টভাষী ব্যক্তি হিসেবে তিনি সমাজে বসবাস করতেন। তার সাথে এলাকার করো বিবাদের খবর পাওয়া যায়নি। তবে নিজ বাড়িতে সম্পত্তিগত বিরোধের কথা জানা গেছে। তিনি দীর্ঘ দিন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া কৃষ্ণপুর জোহরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কো-অপ্ট সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন।
সামছুজ্জামান পাটওয়ারী আরো জানান, ভুট্টো পারিবারিকভাবে ৩ সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে চাঁদপুর হাসান আলী হাই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে, দ্বিতীয় ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়েটির বয়স মাত্র ৩ বছর। তিনি আরো জানান, সম্পত্তিগতভাবে সোহাগসহ অন্যন্যদের সাথে ৪টি মামলা ছিলো। ৩টি মামলা ভুট্টোর পক্ষে রায় হয়ে আরেকটি মামলা চলমান আছে। ধারনা করা হচ্ছে, সম্পত্তিগত বিরোধের জেড় ধরেই এ ঘটনা ঘটাতে পারে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টো কুমারডুগীস্থ এলাকায় সারের ব্যবসা করতো। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply