ঘূর্ণিঝড় আম্পান : চাঁদপুরের নিম্নাঞ্চলে ৫-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশংকা

ইব্রাহীম রনি :
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চাঁদপুরের উপকূলীয় তীর ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল এলাকায় ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
এদিকে এ দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৩ হাজার ৪৫৭ জন। দুর্যোগে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। যে কোন সমস্যায় ফোন করা যাবে ০৮৪১-৬৩৫৯৬ এবং ০১৭৩০০৬৭০৭৯ নম্বরে। জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। সদর, হাইমচর এবং মতলব উত্তর উপজেলার উপকূলবর্তী ১৮টি ইউনিয়নের কিছু সংখ্যক লোক নিজ দায়িত্বে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসন জানায়, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাদেরকে কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার, অনুসন্ধান ও ত্রাণ বিতরণের জন্য দু’টি উদ্ধারকারী নৌযান সচল রাখা হয়েছে। ভলান্টিয়ার সার্ভিস হিসেবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫০ জন, রোভার স্কাউটের ৪০ জন এবং জেলা স্কাউটের ৩৩০ জন সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নৌপুলিশের ১টি থানা, ৫টি নৌফাড়ির মোট ৮১ জন নৌপুলিশসহ কোস্টগার্ডের ৫০ জন সদস্য উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, চাঁদপুর জেলার উপকূলবর্তী চরাঞ্চলের জনসংখ্যা মোট ৭৪ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২৭ হাজার ৮৮০ জন, হাইমচর উপজেলার ২৬ হাজার ২০৪ জন এবং মতলব উত্তর উপজেলায় ২০ হাজার ৮৯৪ জন।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগকালে চাঁদপুর জেলার ৩২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৩ হাজার ৪৫৭ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ১৮ হাজার ৪০০ জন, ফরিদগঞ্জের ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজার ৭৫০ জন, হাইমচর উপজেলার ২২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১১ হাজার জন, হাজীগঞ্জের ৪৬টিতে ১৫ হাজার ৪৫০ জন, কচুয়ার ১৯টিতে ২ হাজার ৪৯৭ জন, মতলব উত্তরের ৮০টিতে ১২ হাজার ২৮০ জন, মতলব দক্ষিণের ৮৪টিতে ১২ হাজার ৩৮০ জন এবং শাহরাস্তি উপজেলার ২২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজার ৭০০ জন ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় জেলায় মজুদ রাখা হয়েছে জি আর চাল ১০০ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ২ লাখ, শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ১ লাখ টাকা, গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ১ লাখ টাকা এবং ২ হাজার পেকেট শুকনো খাবার।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মঙ্গলবার দিনব্যাপী গোমট আবহাওয়া বিরাজ করে। মাঝে মধ্যেই গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টিও হয়েছে।
এদিকে চাঁদপুর জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা-ভারপ্রাপ্ত শাহ মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, সুপার সাইক্লোন আম্পান এর বিশেষ আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি ২৫ অনুযায়ী উপকূলীয় জেলা চাঁদপুর এর অদুবর্তী তীর ও চরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়জনিত কারণে উপকূলীয় তীর ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। তিনি বলেন, সুপার সাইক্লোন আম্পান খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে শেষ রাত হতে ২০ মে বিকেলে অতিক্রমকালে চাঁদপুরের অদূরবর্তী তীর ও চরসমূহে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply