চাঁদপুরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেলে লকডাউন ছাড়া কোন উপায় নেই : শিক্ষামন্ত্রী

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা সম্পন্ন

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ এক সভা গতকাল ২০ জুন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ৫টায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এই সভায় অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধি তথা উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
সভার শুরুতেই প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক গত ক’ মাসে ত্রাণ তথা অর্থ সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এ বছর ত্রাণ সহায়তা হিসেবে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বন্টন করা হয়েছে।
করোনা সম্পর্কিত তথ্যাদি তুলে ধরে তিনি বলেন, এ যাবত আমাদের আক্রান্তের হার ১৬.৪০ শতাংশ এবং মৃত্যু হার ২.৪৫ শতাংশ। জেলা প্রশাসক বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে এখানে মানুষের সচেতনতার ক্ষেত্রে শৈথিল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আমরা সতর্ক করলেও খুব ভালো প্রচারণা না থাকায় তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রচারণা সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপাত্ত না আসায় বেশিরভাগ মানুষই এ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারছে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিরা গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য শেষে কয়েকজন জন প্রতিনিধির বক্তব্য রাখেন। এ সময়ে সিভিল সার্জন সাখাওয়াত উল্যাহ জেলার করোনার আধিক্যতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, চাদপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং কচুয়ায় কম। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের রয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা। এ সময় মন্ত্রী ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমানকে বক্তব্য রাখতে বললে তিনি বলেন, এখানে অধিকাংশই মাস্ক পড়ে, পড়তে চায় না। আর কিছু মানুষের মধ্যে এখনো ধর্মীয় গোড়ামি রয়েছে। তারা বলেন, ‘রোগবালাই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আবার আল্লাহই নিয়ে যাবেন’। আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু জোর করাতো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তারপরও আমরা আমাদের সচেতনামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি।
মন্ত্রী কয়েকজনের কথা শুনে তার বক্তব্যে বলেন, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেলে লকডাউনে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। যদি লকডাউন এড়াতে চান তাহলে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বিশেষ ভূমিকার পালন করতে পারেন। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি- বাজার এবং মসজিদ এ দু’ জায়গায় সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে করোনা সংক্রমণ নিচে নেমে আসবে। কারণ, এ দু’ জায়গাতেই মানুষ বেশি যাওয়া আসা করে। তাছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক এবং হাসপাতালগুলোতে প্রচারণা চালাতে হবে। অন্তত মাস্ক ব্যবহার করুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন- এ দু’-তিনটি বিষয়ে যদি আপনারা সবাইকে সচেতন করতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে এ জেলাকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হাত থেকে যেমন রক্ষা করতে পারি, তেমনি সেটিকে কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি।
তিনি বলেন, এতোগুলো মৃত্যু এড়ানো যেতো, যদি আমরা প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতাম।
পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, করোনারোধে একটি পুলিশং বিট তৈরি করেছি। যারা প্রতি শনিবার মাস্ক এবং গণসচেতনতামূলক কাজ করে। এই কাজে চেয়ারম্যান তথা জনপ্রতিনিধিরাও সচেতন হতে পারেন।
মন্ত্রী পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শুধু শনিবারই না, প্রয়োজনে কাল থেকেই আপনি জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে এই কাজটি আরো বর্ধিত করুন। এটি অনেক সহায়ক হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাই। আর এ প্রচারণা চালাতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণসহ অন্যান্যরা।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুন এই সভায় যুক্ত হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তখনই মন্ত্রীকে জেলা প্রশাসক জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে একটি জুম মিটিং করার আহ্বান জানালে দু’ দিন পরই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply