চাঁদপুরে জাটকায় ধরায় ১৯৯ জেলের জেল-জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকা সংরক্ষণ আইন অমান্য করে জাটকা ধরায় ১৯৯ জেলেকে জেলা ও জরিমানা দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। ১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা সদর, মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আটক জেলেদেরকে পৃথকভাবে জেল ও জরিমানা করেন।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে জাটকা আহরন, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবুও কতিপয় অসাধু চক্র নদীতে জাটকা নিধন করতে নানা অপকৌশল ব্যবহারে করেছে। জাটকা নিধনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলায় প্রায় ৫১ হাজার ১’শ ৯০ জন নিবন্ধিত জেলেকে ৪০ কেজি হারে চাল দেওয়া হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ৪ মাস নদীতে জাটকাসহ অন্যান্য মাছ ধরতে না নামার শর্তে জেলেদের এই খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে। তবে এবছর জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা নিবন্ধিত ১১ হাজার ১শ’ ৮৫জন জেলের জন্য ৪০ কেজি করে বরাদ্দ ৪ মাসের খাদ্য সহায়তা আসেনি। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে জেলে পাড়া এলাকার জনপ্রনিধিদেরকে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা নদীতে জাটকা নিধন করে যাচ্ছে অসাধু জেলেরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে জেলা টাস্কফোর্স বাহিনী।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সাড়ে ৩শ’ অভিযান পরিচালনা করেছেন। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়েছে ৭৩টি। জাটকা জব্দ করা হয়েছে ১৮.০৫২ মেট্টিক টন। অন্যান্য মাছ জব্দ হয়েছে ০.০৪৫ মেট্টিক টন।
নিষিদ্ধ কারেন্টজাল জব্দ হয়েছে ৬২.৯৪০বর্গ মিটার এবং অন্যান্য জাল জব্দ হয়েছে ৫৩হাজার বর্গ মিটার। যার আনুমানিক মূল্য ১২৫ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এসব অভিযানে মামলা হয়েছে ১৬৬টি। জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, অসাধু জেলেদের কোনভাবেই জাটকা শিকার হতে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও তারা নদীতে জাটকা শিকারে নেমে পড়ছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। তবুও আমরা জেলা টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে নদীতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। জাটকা নিধনকারী চক্রের বিরুদ্ধে আগামী ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।
চাঁদপুর জেলা কোষ্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. আসাদুজ্জামান বলেন, চার পয়েন্টে আমরা অসাধু জেলেদের থামিয়ে দিতে টহল দিচ্ছি। তবুও অতিউৎসাহী কিছু জেলে নদীতে জাটকা নিধনে নামছে। আমরা তাদের প্রতিহত করতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, জাতীয় সম্পদ হচ্ছে ইলিশ। আর আজকের জাটকা আগামীর বড় ইলিশ। তাই জাটকা রক্ষা কর্মসূচীতে আমাদের সর্বোচ্চ নজরদারি রয়েছে। অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, অসাধু জেলে চক্র বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার। তবে আমরা তাদের প্রতিহত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছি। দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জেলা ট্রাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply