চাঁদপুরে জেলেদের রিক্সাভ্যান প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, বিতরণ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদ্মা মেঘনা নদীতে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে বেকার জেলেদের বিকল্প কর্ম সংস্থানের জন্য সরকার খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি হতদরিদ্র জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। এরই অংশ হিসেবে চাঁদপুরে ২০ জন জেলেকে রিক্সাভ্যান দেয়ার উদ্যোগ নেয় জেলা মৎস্য অফিস। অপ্রিয় হলেও সত্য, ঐ বিতরন অনুষ্ঠানে এসে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ আসে জেলে হিসাবে যাদের ভ্যান দেয়া হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই জেলে নন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি এগুলো বিতরণ না করে তা স্থগিত ঘোষনা করেন।
বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রিক্সাভ্যান এবং জেলেদের সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। রিক্সাভ্যান বিতরণ স্থগিত করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
যাদের জন্য ভ্যান ভ্যান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের কয়েকজন স্বীকারও করেন তারা প্রকৃত জেলে নন। এদের একজন মিজান হাওলাদার (৫০)। চাঁদপুর সদরের ইচুলি গ্রামে তার বাড়ি পেশায় মাটিকাটা শ্রমিক। আরেকজন একই উপজেলার তরপুরচন্ডি এলাকার কৃষক আলী খান (৬০) এবং কয়লাঘাটের বিল্লাল হোসেন (৫২)। এই তিনজন স্বীকার করেন, তারা কেউ জাটকা জেলে অর্থাৎ পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করেন না। তবে কীভাবে জেলে তালিকায় নাম এসেছে এসব নিয়ে মুখ কোন কথা বলতে চাননি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তসলিম বেপারী অনিয়ম স্বীকার করে জনপ্রতিনিধিদের দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বুধবার যে ২০ জন জেলেকে এখানে রিকশাভ্যান বিতরণের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে, তার মধ্যে দুইজন প্রকৃত জেলে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, যাদেরকে ভ্যান দেয়ার কথা ছিল তারা সবাই নিবন্ধিত জেলে। এ তালিকা করেছে কারা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা। ২০১৬ সালে তারা নিবন্ধিত হয় বলে তিনি জানান। তালিকায় অপেশাদার জেলেও থাকতে পারেন বলে তিনিও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরাতো তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখিনি যে তারা নদীতে মাছ ধরেন কি না? তবে এখন যেহেতু বিষয়টি ধরা পড়েছে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি জানান, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পে প্রতিটি ভ্যান তৈরিতে সরকারি বরাদ্দ মিলেছে ২৫ হাজার টাকা। চাঁদপুরে ২০ জনকে ভ্যান দেয়া হচ্ছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজীদা শাহনাজকে প্রধান এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জামালউদ্দিনকে নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বিতরণ করতে গিয়ে আমি যখন জেনেছি এখানে অনিয়ম হয়েছে, জেলে নেই তাৎক্ষণিক বিতরণ স্থগিত ঘোষনা করে দিয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা এখনো তদন্ত রিপোর্ট দেয়নি। আমরা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর যদি দেখা যায় যারা ভ্যান পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে না দিয়ে অন্যদেরকে দেয়া হচ্ছে- তাহলে এ তালিকা বাদ দেয়া হবে। এছাড়া কাউকেই দেয়া হবে না। আমি নিজেও ক্ষুদ্ব জেলা মৎস্য বিভাগের উপর। যারাই এগুলো করেছেন, কেউ ছাড় পাবেন না। আমি নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েও যাচাই-বাছাই করে তালিকা করছি । যারা একেবারে প্রান্তিক দরিদ্র জেলে তাদেরকে এগুলো দেয়া হবে। তাছাড়া নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply