চাঁদপুর মাছঘাটে প্রচুর ইলিশ আমদানি

ইব্রাহীম রনি :
চাঁদপুরের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ইলিশের আমদানি। এখন সাগর অঞ্চলের ইলিশে ভরপুর দেশে ইলিশের সবচে বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজার। লোকাল মাছের আমদানি তেমন না থাকলেও ২৭ জুলাই সোমবারও এ বাজারে আমদানি হয়েছে প্রায় ৭০০ মন ইলিশ। আমদানি হওয়া এসব মাছের বেশিরভাগই সাগরের। এতে করে ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় বড়স্টেশন মাছ বাজার এখন সরগরম।


চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারের আড়ৎদাররা জানান, প্রায় এক মাস আগে এখানে ৫শ মন ইলিশ আমদানি হতো। গত সপ্তাহে এ বাজারে এক থেকে দুই হাজার মন ইলিশের আমাদানি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সাগর অঞ্চলের মাছের আমদানি কিছুটা কমেছে। তারা জানান, মাছের আমদানি বাড়ায় দামও কিছুটা কমেছে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালি, হাতিয়া, সন্দীপ, ভোলা, বরিশালসহ সাগর অঞ্চল থেকে কয়েকটি ফিশিং বোট চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছে। প্রতিটি বোটে রয়েছে ৫০ থেকে ১০০ মণ ইলিশ। সড়ক পথেও আসছে পিকআপ ও ট্রাকভর্তি ইলিশ। এসব ইলিশ আনলোড করে আড়তের সামনে স্তুপ করে ডাক তুলছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলছেন, মাছের আমদানি বাড়লেও দাম তেমন কমেনি।


হাজীগঞ্জ থেমে মাছ কিনতে আসা জাহিদ হাসান বলেন, আমি এক কেজি ওজনের দশটি মাছ কিনেছি ১০ হাজার টাকা দিয়ে। এগুলো লোকাল মাছ না। লোকাল মাছের দাম আরও বেশি।
কুমিল্লা থেকে ইলিশ কিনতে আসা আল-আমিন বলেন, চাঁদপুরকে বলা হয় ‘ইলিশের বাড়ি’। অথচ এখানে এসে দেখলাম চাঁদপুরের মাছ খুবই কম। এখানে সবই উপকূলীয় এলাকার মাছ। দামও বেশি মনে হচ্ছে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারের ইউসুফ বন্দুকসী আড়তের সত্ত্বাধিকারী মো. নাদিম বলেন, চাঁদপুরের বাজারে এখন হাতিয়ার মাছই বেশি আসছে। লোকাল মাছের আমদানি খুবই কম। তিনি জানান, সোমবার এ বাজারে ২ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা, এক কেজি ৫শ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা, এক কেজি সাইজের মাছ ১ হাজার টাকা, ৭শ-৮শ’ গ্রামের মাছ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ৫শ-৬শ’ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারের আড়তদার ইমান হোসেন গাজী বলেন, গত এক মাস আগে থেকে নদীর মাছের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। মাছ আসছে নেয়াখালি, লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকেও। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে এক থেকে দুই হাজার মন ইলিশের আমদানি হয়েছে। এখন প্রতিদিন প্রায় ৮০০ মন ইলিশ আমদানি হচ্ছে। ঈদের আগে ইলিশের আমদানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি ১ লাখ টাকা, দেড় কেজি ওজনের মাছ ৫০ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৩৮ হাজার টাকা, ৭শ গ্রামের ইলিশ মন ৩২ হাজার টাকা, ৫শ গ্রামের ইলিশ প্রতি মন ২২ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (নদীকেন্দ্র) চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা) ড. আনিছুর রহমান বলেন, এ বছর করোনা কারণে পানির গুণাগুণ ভালো আছে। দূষণ অনেক কম হওয়ায় মাছগুলো ভালো খাদ্য পেয়েছে। আশা করছি, এবার মাছের উৎপাদন আরও ভালো হবে। এছাড়া এবারের ইলিশ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি সুস্বাদু হবে।
তিনি বলেন, মেঘনা এবং চাঁদপুর অঞ্চলে চর-ডুবোচরসহ নানা কারণে এখানে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। আশা করছি, বৃষ্টিপাত এবং পানি প্রবাহ বাড়লে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে এ অঞ্চলেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply