চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ পুনর্বাসনে ৪২১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রেরণ

আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধের ৩৩শ’ মিটার এলাকাজুড়ে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো স্থানে মেঘনা নদীর ভাঙন দেখা দেয়। এতে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতভীটে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। আর ভাঙনরোধে প্রতিবারই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালিভর্তি জিও ভ্যাগ কিংবা ব্লক ফেলে কোটি কোটি টাকার সংস্কার কাজ করা হয়। অথচ একটি বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ বা দশ বছর পর পর সংস্কার করার নিয়ম থাকলেও সর্বশেষ ২০০২ সালের পর থেকে এই বাঁধটি স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হয়নি। তাই মেঘনার ভাঙন থেকে পুরাণবাজার তথা চাঁদপুরকে রক্ষায় বার বার কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে সংস্কার না করে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবী উঠেছে সচেতন মহল থেকে।
এরই প্রেক্ষিতে ৪২১ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এটি হলে চাঁদপুরের নতুন বাজার এবং পুরাণবাজার এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছরও বর্ষার মৌসুমে মেঘনার ভাঙসে কয়েক দিনের ব্যবধানে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকার ১৫টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় থেকে জরুরি ভিত্তিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৯৩ হাজার বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এরপর এবছর আবার ভাঙন দেখা দিলে পুনরায় জরুরী ভিত্তিতে ১৮ হাজার বালিভর্তি জিও ভ্যাগ ফেলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের মোট ৯ হাজার বালিভর্তি জিও ভ্যাগ ফেলা হয়েছে। বাকি ৯ হাজার বস্তা চলমান পক্রিয়ায় রয়েছে। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সুত্রটি থেকে আরো জানা যায়, চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ সংস্কারে ৪২১ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রকল্প স্থগিত করা হয়।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধটি দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার করা হয়নি। একটি বাঁধ পাঁচ বা দশ বছর পর পর সংস্কার করতে হয়। কিন্তু তা করা হয়নি। পুরো শহর রক্ষা বাঁধ পুনর্বাসনের জন্য আমরা ৪২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠিয়েছি। এ প্রকল্প গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্থগিত করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সমীক্ষা করে পুনরায় প্রকল্প দাখিল করতে। কিন্তু করোনার কারণে সমীক্ষার জন্য একটি প্রকল্প তৈরী করা এখনো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি পাস হলে এবং কাজ হলে চাঁদপুরকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা যাবে। সকল আতংক-উৎকণ্ঠাও দূর হবে।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই এলাকাটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। গত বছর হরিসভা এলাকায় ভাঙনে বেশকিছু বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন আতংকে রয়েছে হরিসভা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উপাসনালয়ও রয়েছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহি পুরানবাজার ব্যবসায়িক এলাকাও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো জহির উদ্দিন আহমেদ জানান, বর্ষা মৌসুমে পানি অতিরিক্ত পানির চাপ হলে শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুধবার হঠাৎ করে চাঁদপুর পুরাণবাজার ৩০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে সমস্যা হচ্ছে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামত করছি। চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত করতে হলে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে তা করতে হবে। আমরা মন্ত্রনালয়ে একটি প্রকল্প দাখিল করেছি। এই প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুর শহরে ৩ হাজার ৩০০মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ আছে তা শক্তিশালী ও দৃঢ়করণ করবো। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৫১ কোটি টাকা খরচ হবে। যদি প্রকল্পটি পাস হয় তাহলে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply