চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জে করোনাভাইরাস কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে

  • চাঁদপুর শহরে বসবাসকারী এক নারী করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে মারা যায়। পরে তাকে হাজীগঞ্জের রাজাগাঁও এলাকায় দাফন করা হয়।

ইব্রাহীম রনি :
চাঁদপুর সদর উপজেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাস কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। এ দু’টি উপজেলায় সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ার বিষয়টি গতকাল বুধবার জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এর ফলে চলতি সপ্তাহে বেড়ে গেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও।

প্রথম দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা কয়েকজনের করোনা সনাক্ত হলেও এখন স্থানীয় লোকজনই আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, তারা কোথায় এবং কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল ৫ মে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত ২৮ জনের মধ্যে এ দু’ উপজেলাতেই সনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। বাকীরা অন্যান্য উপজেলার। এর মধ্যে সদর উপজেলার সনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন এবং ফরিদগঞ্জের ৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় অবস্থানকালে মারা গেছেন ২ জন। আর ফরিদগঞ্জের ২ জন মারা গেছেন।
প্রথম দিকে মতলব উত্তর উপজেলায় ৩ জন করোনা আক্রান্ত হলেও সেখানে সোমবার পর্যন্ত নতুন কোন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়নি। তবে গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে সদর উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

  • চাঁদপুর সদর হাসপাতালে মারা যাওয়া রাজারগাঁও এলাকার করোনা আক্রান্ত নারীর কবর খুঁড়ছেন অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন

চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজেদা পলিন বলেন, সদর উপজেলায় ১২ এপ্রিল প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হন। এরপর থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন। এর মধ্যে মৃত ১ জন। মৃত আরেকজন শহরে থাকলেও তার বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলায় হওয়ায় তাকে ওই উপজেলায় দেখানো হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন ৫ জন। বাকীরা চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, চাদপুরের কিছু কিছু জায়গায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে- তা এখন প্রমাণিত। যেহেতু অনেকগুলো কেস পাওয়া যাচ্ছে। গত দু’ দিনেই ৬ জন সদরে সনাক্ত হয়েছেন। তাই আমরা বলবো, অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

  • হাজীগঞ্জে উপসর্গ ছাড়াই যুবক করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়ি গতকাল লকডাউন করা হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. মো. কামরুল হাসান জানান, উপসর্গ থাকায় ফরিদগঞ্জে প্রথম ১১ এপ্রিল নমুনা আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনোলোজিস্টের। তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে তিন দিন পর ১৪ এপ্রিল। ১৩ এপ্রিল এক যুবক নমুনা পাঠানোর পর তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে ১৬ এপ্রিল। সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া কিশোরীর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২৩ এপ্রিল। তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে ২৭ এপ্রিল। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হওয়া এক যুবক ২৬ এপ্রিল ফরিদগঞ্জে পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এছাড়া ২৬ এপ্রিল ফরিদগঞ্জের নিজ বাড়িতে বৃদ্ধ বাসু মিজি মারা যাওয়ার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে তার নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হলে ২ মে রাতে তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। আর ২৫ এপ্রিল আরেক বৃদ্ধের নমুনা সংগ্রহ করা হলে পরবর্তীতে তার রিপোর্টও পজেটিভ আসে। এর মধ্যে দু’জন মৃত আর দু’জন চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি জানান, আক্রান্তদের মধ্যে শরীফ হোসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। আর কিডনী চিকিৎসার জন্য ঢাকা যায় শারমিন। পরবর্তীতে সে এখানে আসার পর তার করোনা ধরা পড়ে। এখন সে কোথায় আক্রান্ত হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। এছাড়া আক্রান্ত বাসু মিজি এবং আব্দুস সাত্তার এলাকার বাইরে কোথাও যাওয়ার রেকর্ড নেই।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের ল্যাব টেকনোলোজিস্ট চাঁদপুরে থাকেন। তিনি ফরিদগঞ্জ থেকে চাঁদপুরে আসা-যাওয়া করেন। তার ধারণা তিনি এর মধ্যেই কোথাও কোনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, এসব থেকে বলা যায়, ফরিদগঞ্জে কিছুটা হলেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। তাই আমরা বলবো, অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, সদর উপজেলা এবং ফরিদগঞ্জে এখন সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। ফলে একজন থেকে আরেকজন সংক্রমিত হচ্ছে। আক্রান্ত রোগী আমাদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়া হাজীগঞ্জ উপজেলায়ও কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পথে।
তিনি বলেন, এখন ঘরে থাকতে হবে। এর বিকল্প নেই। এছাড়া অতি প্রয়োজনে বাইরে বের হলেও ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সিভিল সার্জন জানান, প্রথম মতলব উত্তরে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তির করোনা পজেটিভ আসার পর সেখানে ৩ জন করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। লকডাউন করার পর সেখানে এখন নতুন করে কেউ আক্রান্ত হচ্ছে না।

জেলার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি :
চাঁদপুর জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পাঠানো হয়েছে ৫৪৯ জনের। এর মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া গেছে ৪৪৭ জনের। বাকী রয়েছে ১০২ জনের রিপোর্ট। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৮ জন। এর মধ্যে মৃত ৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ১০ জন। আর বাকী ১৪ জন হাসপাতাল ও নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply