চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের কাজ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের কাজ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। এই প্লান্টের কাজটি যে প্রতিষ্ঠান করবে সে প্রতিষ্ঠানের একটি টিম গতকাল রোববার চাঁদপুরে আসে। প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এ টিম হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং যে স্থানে অক্সিজেন প্লান্টের সিলিন্ডারসহ মেশিনপত্র বসবে সেসব স্থান পরিদর্শন করে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির এজিএম ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার সাইফ চৌধুরী গতকাল রোববার বিকেলে চাঁদপুর আসেন। তাঁরা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাইরে থেকে পরিদর্শন করেন এবং তৃতীয় তলায় যে দুটি কেবিন কোভিড রোগীদের জন্যে বরাদ্দ থাকবে সে কেবিন দুটিও দেখেন। একই সাথে হাসপাতালের পূর্ব অংশের নীচতলায় উত্তর পাশে গাইনী ওয়ার্ডের একটি অংশও তাঁরা দেখেন। এখানেই অক্সিজেন প্লান্টের সিলিন্ডারসহ মেশিনপত্র সবকিছু থাকবে এবং এখান থেকেই অক্সিজেন সাপ্লাই হবে।


স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল টিমের পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ জামাল সালেহ উদ্দিন আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর, আবাসিক সার্জন ও জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম এবং হাসপাতালের আরএমও ও করোনাভাইরাস বিষয়ে ফোকালপার্সন ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী ও মন্ত্রীর স্থানীয় প্রতিনিধি অ্যাডঃ সাইফুদ্দিন বাবু এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ।
উল্লেখ্য, এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতায় করা হচ্ছে। স্পেকট্রার এজিএম ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার থেকে কাজ শুরু করতে পারলে পাঁচদিনের মধ্যে ইনশাআল্লাহ পুরো কাজ শেষ করা যাবে। আর তখন থেকেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীদের প্রয়োজন সাপেক্ষে হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। আর এর দ্বারা কোভিড অথবা নন-কোভিড রোগীদের মধ্যে যারা প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতেন সেটা আর হবে না। এই হাই ফ্লো অক্সিজেনের দ্বারা প্রতি রোগীকে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন দেয়া যাবে। আর বর্তমান ব্যবস্থাপনার দ্বারা দেয়া যাচ্ছে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ লিটার।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ এবং হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড়ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু এই দুজনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং সার্বিক সহযোগিতায় চাঁদপুরে স্বাস্থ্যখাতে অনেক বড় একটি কাজ হতে যাচ্ছে। যার দ্বারা শুধু চাঁদপুর জেলাবাসীই নন, আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষও উপকৃত হবে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যারা প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আসে, তাদের অনেকেই অক্সিজেনের অভাবে মারা যান। এ বিষয়টি আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জানতে পেরে তিনি এবং তাঁর বড়ভাই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের উদ্যোগ নেন। যেটির কাজ আগামীকাল থেকে শুরু হবে। প্রথমে আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোভিড এবং নন কোভিড রোগীদের মধ্যে ভাগ করে ৩০টি বেডে এই অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে তৃতীয় তলায় দুটি কেবিনে পাঁচটি বেডেও এ ব্যবস্থা রাখা হবে। তাঁরা জানান, করোনা চলে গেলেও এই অক্সিজেন প্লান্ট সব সময়ের জন্যই কাজে লাগবে। এখানে আইসিইউ স্থাপন করা হলে তখনও এই অক্সিজেন প্লান্ট কাজে লাগবে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর জেলার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মানুষ ভর্তি হতে থাকে। দেখা গেছে যে, এমন কিছু রোগী একেবারেই শেষ পর্যায়ে হাসপাতালে আসে, যখন তাদের অক্সিজেনে মারাত্মক সঙ্কট দেখা দেয়। হাসপাতালে এখন অক্সিজেনের যে ব্যবস্থা রয়েছে তার দ্বারা তাদেরকে সে সঙ্কটের সময় সাপোর্ট দেয়া যায় না। আর ওই মুমূর্ষু অবস্থায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতেই এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের উদ্যোগ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড়ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু। এটি তাঁদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্পূর্ণ সহযোগিতায় করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply