তদন্তের আগেই কচুয়ার স্কুল ভবন নির্মাণে নিম্নমানের মালামাল সরিয়ে নিল ঠিকাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়মের চিহ্ন হিসেবে থাকা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে ফেললো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নব-নির্মিত ৬তলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যবহ্যত সামগ্রী পাথর, সিলেকশন বালু সরিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনন্ত ট্রেডার্স (জেবি) এর লোকজন। বিকাল ৫টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মালবাহী ট্রাকে করে এসব মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভবন নির্মানের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, ভবন নির্মাণে ঠিকাদারে ও ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজসে অনিয়ম হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি এখনো কোন তদন্ত হয়েছে কি না জানি না। এছাড়া যেহেতু নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে কাজ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা দায়ের হয়েছে। তাই আদালতের নির্দেশনা ব্যতীত মালামাল সরিয়ে নেওয়া ঠিক নয়। এ বিষয়ে ঠিকাদার আশ্রাফুল আলম রনির মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ণ দাস শুভকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ভবন নির্মাণ অনিয়ম এবং নি
ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয়া হচ্ছে কি না এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না।

উল্লেখ্য, ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ দরপত্রের মাধ্যমে পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনন্ত ট্রেডার্স (জেবি)। এরপর অনন্ত ট্রেডার্স কাজটি বিক্রি করে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের সাবেক কর্মচারী আশ্রাফুল আলম রনির কাছে। এ ভবন নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়য়মের অভিযোগ করে আসছিলেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। অভিভাবকদের অভিযোগ, সিডিউলে ঢালাই কাজে এক নম্বর সিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে দুই নম্বর সিমেন্ট, উন্নতমানের স্টোন চিপস-এর পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের ভোতা পাথর। কম দেওয়া হয়েছে রড। ব্যবহার করা হয়েছে ডাস্ট ও মাটি মিশ্রিত বালু।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় অভিভাবকরা একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরকে জানানোর পর এক পর্যায়ে তিনি কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পরে ১৯ জুলাই উপসহকারী প্রকৌশলী সাইটে গেলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন স্থানীয়রা। অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ারের গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার পর ইঞ্জিনিয়ার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ৪ দিনের মধ্যেই গত ২৩ জুলাই উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহানকে সাময়িক বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় গত ২৮ জুলাই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রশাসন আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী নূর আলমকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় বদলি করা হয়।
স্কুল ভবন নির্মাণে কোনও অনিয়মের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, এখনও ঢাকা থেকে চিঠি আসে নাই। চিঠি পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কাজের গুণগতমান যাচাই করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply