তিন দিনের মধ্যে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এসি পরীক্ষা করতে হবে

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
আগামী তিন দিনের মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অধীন সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ ও এসি পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে ডিপিডিসি।
শুক্রবার রাতে এশার নামাজ আদায়ের সময় নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে ছয়টি এসি একই সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জন মারা গিছেন। বিস্ফোরণের পর ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
বিস্ফোরণের পর মসজিদে গ্যাসের আগুনও দেখা গিয়েছে। একটি সূত্র জানায়, মসজিদের নিচে গ্যাসের লাইন রয়েছে। সেই গ্যাস লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি একসঙ্গে ছয়টি এসি বিস্ফোরণের ঘটনা রহস্যজনক বলে বিদ্যুৎ সংযোগ ও এসির অবস্থাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠনে এসি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। এসি ব্যবহার করতে হলে নির্দিষ্ট লোডের বৈদ্যুতিক লাইন নিতে হয়। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্দিষ্ট লোড বরাদ্দ না নিয়েই এসি ব্যবহার করা হয়। এতে করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পরপর এসি সার্ভিসিংও করতে হয়। কিন্তু এসব ঠিকঠাক মেনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসি ব্যবহার করা হয় কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
ডিপিডিসির নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়গুলো বেশ স্পর্শকাতর হওয়ায় কথা বলাও কঠিন। তিনি বলেন, আমরা বাসার এসির বিষয়ে যতটা যন্তশীল ঠিক ততটা উপাসনালয়ের এসির ক্ষেত্রে নই। কারণ এসিগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে চলে। মানুষও নির্দিষ্ট সময়েই সেখানে যায়। ফলে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ খুব বেশি মাথা ঘামায় না। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের যে পরিচালনা কমিটি রয়েছে তাদের দায়িত্বশীল এবং সচেতন হওয়ার কোনও বিকল্প নেই। কারণ এখানে অনেক মানুষ সমবেত হন। যে কোনও দুর্ঘটনায় বেশি সংখ্যক মানুষের হতাহতের আশঙ্কা থাকে।
ডিপিডিসি জানায়, কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমি গতরাত (শুক্রবার) ২টা পর্যন্ত বিষয়টি মনিটর করেছি। ঘটনার পর পর আমাদের প্রতিনিধি সেখানে গেছেন। আমরা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি। শনিবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কী দেখলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিপিডিসির কোনও ত্রুটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে হয়নি। এরপরও বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণের জন্য তিন সদস্যর একটি কমিটি গঠন করেছি।
অনেকেই বলছেন, ট্রান্সফরমারও বিস্ফোরিত হয়েছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ট্রান্সফরমারের কোনও ক্ষতি হয়নি। অক্ষত অবস্থায় আছে। মসজিদ থেকে ১০/১৫ ফুট দূরে ছিল ট্রান্সফরমারটি। ফলে দুঘটনার ৪/৫ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার শুরু করতে পেরেছিলাম। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এই ঘটনা বিদ্যুতের কারণে হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়নি। তারপরও তদন্ত হোক। বোঝা যাবে।
এদিকে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আরও একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি আজই সব ধমীয় প্রতিষ্ঠানের সংযোগ ও এসি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আদেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ বিষয়ে ডিপিডিসি কোনও উদ্যোগ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমরা আজকেই এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করবো। ডিপিডিসির সব বিভাগীয় বিতরণ অফিস তিন দিনের মধ্যে উপাসনালয়ের এসব এসি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের রিপোর্ট দেবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply