দেশের প্রয়োজনে সরকার প্রদত্ত যে কোন দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বদা প্রস্তুত : সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে, এই মূহুর্তে সীমান্ত এলাকায় কোন শংকা নেই।
গতকাল রবিবার দুপুরে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দক্ষিণ টরকী এলাকায় আব্দুল ওয়াদুদ সরকার ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতাল উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সেনা প্রধান বলেন, আমি একাধিকবার মিয়ানমার ভিজিটে গিয়েছি। সেসময় মিয়ানমারের সেনা প্রধান ছাড়াও তাদের নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানরা সেই দ্বিপাক্ষীক মিটিং এ ছিলেন। তখন আমাকে আশ^াস দিয়েছে যে, তাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের অভ্যন্তরীন সমস্যা থাকায় তারা অভিযান চালাচ্ছে। যার কারণে তাদের সীমান্তে মাঝে মাঝে জনবল বৃদ্ধি করছে। এতে করে তাদের সাথে যে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে, এই বিষয়টা যেন অন্যভাবে চিন্তা না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
জেনারেল আজিজ বলেন, আমাদের সাথে মিয়ানমারের সেনা প্রধানের যোগাযোগ আছে। যখনই কোন কিছু হয়, তা যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধান করে থাকি। এই মুহূর্তে তেমন কিছু হওয়ার মত পরিস্থিতি নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সেনা প্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি রাজনৈতিক। এ ব্যাপারে আমাদের সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করছে, আগামী দিনেও করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, যে কোন দুর্যোগে সেনাবাহিনী কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। করোনা চলাকালীন সময়ে সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। কারণ, এটি হচ্ছে আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাতে আমাদের দায়বদ্ধতা ও সীমাবদ্ধতা আছে। দায়বদ্ধতা হচ্ছে দেশের যে কোন প্রয়োজনে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দায়িত্ব পালন করতে সর্বদা প্রস্তুত। দেশে যখন করোনা প্রাদুর্ভাব দেখাদেয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়, তখন সেনাবাহিনী করোনা প্রতিরোধে শতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬২ জেলায় কাজ করে। এর মধ্যে প্রত্যেক জেলায় ১১শ’ থেকে ১২শ’ সেনা সদস্য গাড়ী নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে খাদ্য বিতরণসহ অন্যান্য সরকারি কাজ বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। এছাড়াও অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরী করে করোনার কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত গর্ভবতী মা ও শিশুকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এবং মানুষের মাঝে স্বাস্থ সচেতনতার সৃষ্টি করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মৃণাল কান্তি দে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিস, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. কুদ্দুছ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য শিল্পপতি এম ইসফাক আহসান, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ, ওসি মো. নাসির উদ্দিন মৃধা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুরশরাত জাহান মিথেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন’সহ ও সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের আগে হাসপাতাল সম্পর্কে স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ওসমান সরোয়ার উপস্থিত সুধীদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করেন। পরে সেনা প্রধান হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপন করেন।
সেনাবাহিনীর নিজস্ব হেলিকপ্টারযোগে সেনা প্রধান অনুষ্ঠান স্থলে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সুধীমহল তাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠান শেষে তিনি পুন:রায় হেলিকপ্টারযোগে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ত্যাগ করেন।
সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এই হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণ করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply