পারভেজ করিম বাবুর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার :
যৌতুকের দাবিতে নিজের স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় মারধরসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ করিম বাবুকে আসামী করে মামলা হয়েছে। ২৩ মার্চ মঙ্গলবার চাঁদপুরের আদালতে মামলাটি করেন তার স্ত্রী আসমা আক্তার নুপুর। মামলাটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই নারী উল্লেখ করেন, আমার স্বামী পারভেজ করিম যৌতুক লোভী, নারী নির্যাতনকারী, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাহীন লোক।
গত ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তালতলাস্থ পাটওয়ারী বাড়ির মৃত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. পারভেজ করিমের সাথে রামগঞ্জের কাঞ্চনপুর এলাকার সৈয়দ আবুল খায়ের বাবুলের কন্যা আসমা আক্তার নুপুরের বিয়ে হয় ৫ লাখ টাকা মোহরানায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের সময় আসামী তার স্ত্রীকে নাকফুল ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। পক্ষান্তরে ওই সময় নুপুরের বাবা ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও ১ লাখ টাকার সাজানিসহ মোট ৮ লাখ টাকা খরচ করেন। বিয়ের পর আসামী তার স্ত্রীকে উঠিয়ে নিলেও মোহরানা পরিশোধ না করে দাম্পত্য জীবন শুরু করে। সংসার জীবন চলাকালে আসামী বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীকে চাঁদপুরের সেবা সিটি সেন্টারে ফ্ল্যাট কেনার জন্য যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য নির্যাতন শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী নুপুরের বাবা তার মেয়ের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে পরিশোধ করার শর্তে এক বছরের জন্য হাওলাত হিসেবে পারভেজ করিমকে ৩০ লাখ টাকা প্রদান করে। পরে ওই টাকা দিয়ে সেবা সিটির অষ্টম তলায় ফ্ল্যাট ক্রয় করে। কিন্তু সে আজও ওই টাকা ফেরত দেয়নি। টাকা দেয়ার পর থেকে স্ত্রীর উপর নির্যাতন বন্ধ রাখেন। এর কিছুদিন পর আসামী পারভেজ করিম চাঁদপুরে ঠিকাদারী ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য এবং বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখার শর্তে তার স্ত্রীর কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু এতে তার স্ত্রী রাজি না হওয়ায় শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় পারভেজ করিম বাবু গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে তালতলার ভাড়া বাসায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে যৌতুকের দাবিতে শরীরে বিভিন্ন স্থানে থাপ্পড়, এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারে। মারধরের এক পর্যায়ে সে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার, কাপড়-চোপড় রেখে দিয়ে স্ত্রীকে এককাপড়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ভিকটিম তার মা এবং সাক্ষীদের জানানোর পর স্বাক্ষীদের চেষ্টায় শহরের মমিনপাড়াস্থ বাসায় সালিসি বৈঠক বসে। সালিসে উপস্থিত হয়ে আসামী পারভেজ করিম বলে, ‘১০ লাখ টাকা যৌতুক না দিলে সে তার স্ত্রীকে নিবে না এবং অন্যত্র বিয়ে করে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা আদায় করবে।’ এ বলেই সে সালিসি বৈঠক ত্যাগ করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পারভেজ করিম বাবুর যৌতুকের বলি হয়ে বর্তমানে পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় নালিশ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দিতে আদালতের প্রতি আবেদন জানানো হয়।
নির্যাতনের শিকার আসমা আক্তার নুপুর বলেন, আমার স্বামী আমাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। সংসার রক্ষা করার জন্য কখনো প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু এখন অনেকটা নিরুপায় হয়ে মামলা করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, পারভেজ করিম বাবু জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ৫ বছর আগে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পুরাণবাজারের পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকার হাজী আবুল বাশারের মেয়ে নূসরাত জাহানকে বিয়ে করেন। যার এ এফিডেভিট করা হয় পরদিন ২৯ এপ্রিল। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘণ করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে তার বিয়ের এফিডেভিটের ফটোকপিসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে অভিযোগ দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply