‘হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষের সম্পত্তি রক্ষার্থে যা করার প্রয়োজন, তা করবো’

চাঁদপুরের স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে মতবিনিময়ে পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন

: শাখাওয়াত হোসেন শামীম :
চাঁদপুরের স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে হাজীগঞ্জে কর্মরত সংবাদকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টায় পৌর সভাকক্ষে সংবাদকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে পৌরসভার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে মতবিনিময়ে পৌরসভার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন, প্যানেল মেয়র-১ ও ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাহিদুল আযহার আলম বেপারী, ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাসীন ফারুক বাদল, ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন, পৌর এ্যাসেসর মো. আবু ইউছুফ।
হাজীগঞ্জ পৌর সচিব মুহাম্মদ নূর আজম শরীফের সঞ্চালনায় মতবিনিমকালে পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন বলেন,
৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু করি । যা গভীর রাত পর্যন্ত অপসারণের কাজ চলে। আমরা সেই স্থান থেকে ৪২ ট্রাক্টর আবর্জনা অপসরারণ করি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার কারণে ওই স্থানে বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনার স্তূপ হয়েছে। যা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে ওখানের ব্যবসায়ীরা পৌরসভাকে দোকান ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়। তাই পৌরসভা ওই আবর্জনা অপসারণ করেছে। তাহলে এখানে আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় রাতের আঁধারে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আসবে কেন? পৌরসভা তো ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারসহ অনেক কাজ (উন্নয়নমূলক) দিন ও রাতে করে থাকে।
ওই দিন আবার আমি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারনে চিকিৎসার কাজে ঢাকায় যাই। তখন আমার মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল। পরে জানতে পারি, এই আবর্জনা অপসারণ করার সময় মসজিদের (হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ) নামে একটি পক্ষ ঝামেলা সৃষ্টি করে। এই খবর পেয়ে তাদের নিবৃত্ত (শান্ত) করার জন্য আমি রাতেই ঢাকা থেকে ফিরে আসি।
তিনি আরো বলেন, বলা হয়েছে ওনার (ড. আলমগীর কবির পাটওয়ারী) সাথে সমন্বয় করার জন্য। আমি ওনার সাথে কিসের সমন্বয় করবো। ওনার তো এখানে জায়গা নেই। এটা পৌরসভার জায়গা, পৌরসভা পরিস্কার করেছে। অথচ আমাকে হেয় করা হয়েছে। কিন্তু এই সম্পত্তি-তো আমার ব্যক্তিগত নয়, পৌরসভার ১ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের সম্পত্তি। তারা (জনগণ) আমাদের (পৌর পরিষদ) ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। তাই আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি।
পৌরসভার সম্পত্তি রক্ষার্থে যা করার প্রয়োজন, তা করবো।
সম্পত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা (মসজিদ কর্তৃপক্ষ) বলছেন, ২০০৪ সালে এই সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে। অথচ কাগজপত্রের মাধ্যমে পৌরসভার জন্মলগ্ন থেকেই এই সম্পত্তি ব্যবহার করে আসছে। ওখানে বসে একসময় ট্যাক্স আদায় হতো। সুতরাং আপনারা আমাদের প্রতিপক্ষ না। যার কাছ থেকে জায়গা কিনছেন, তার কাছ থেকে সম্পত্তি বুঝে নেন। শুধু শুধু মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্ট্র গ্রো করার চেষ্টা করবেন না। আমরা আমাদের সম্পত্তিতে রয়েছি। আমরা আমাদের সম্পত্তির মধ্যে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করেছি।
এ সময় পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন বলেন, আমার নানী মরহুম খান বাহাদুর আমিন মিয়ার সাহেবের সহধর্মিণী মরহুম লেয়াকতের নেছা বিবি ৯৯ শতাংশ জায়গা তৎকালিন ইউনিয়ন পরিষদকে দিয়েছিলেন। বলা হয়েছে, যদি ইউনিয়ন পরিষদে ব্যবহার না হয়, তাহলে ওনার ওয়ারিশরা তা ভোগ করবে।
পরবর্তীতে ওখানে ইউনিয়ন পরিষদ না থাকায় এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বার্থে আমরা ড. আলমগীর কবির পাটওয়ারীর সাথে সমঝোতা করে ওই সম্পত্তি ব্যবহার করতে দিয়েছি। তখন বলা হয়েছিল, ওখানে পৌরসভার নামের একটি পাঠাগার করা হবে এবং পৌরসভার একটি নামফলক থাকবে। সময় চেয়ে তারা দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করেছে। যা আজ পর্যন্ত হয়নি, অর্থাৎ তারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। অথচ তখন পৌর পরিষদ ও আমার পরিবার এই সমঝোতার বিপক্ষে ছিল। আমি তাদেরকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাজি করেছি।
তিনি আরো বলেন, হাজীগঞ্জ প্লাজা জনগণের হাটার জায়গা দখল করে আছে। সেখান তাদের বাঁধার কারণে ড্রেন পরিস্কার করতে পারি না। তারা ড্রেন পরিস্কার করবে বলে, কিন্তু করেনা। আমি অনুরোধ করবো তারা যেন এই পথটি উন্মুক্ত করে দেয়।
মতবিনিময় সভায় সংবাদকর্মীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন আল আজাদ, সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন, সাবেক সভাপতি খালেকুজ্জামান শামীম, সাধারণ সম্পাদক এনায়েত মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান টুটুল, সদস্য মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ প্রমুখ।
এ সময় পৌর প্যানেল মেয়র-১ ও ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাহিদুর আযহার আলম বেপারী বলেন, হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ আমাদের প্রাণের সংগঠন (প্রতিষ্ঠান)। যারা মসজিদ পরিচালনা করছেন, পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা বলছেন, ২০০৪ সালে জমি রেজিস্ট্রি করছেন, অথচ ২০০৪ এর আগে থেকেই পৌরসভার স্থাপনা রয়েছে। যেহেতু এখানে পৌরসভার স্থাপনা রয়েছে, তাহলে কেন জেনে-শুনে মসজিদের নাম দিয়ে বিতর্কিত জায়গা ক্রয় করেছেন? অবশ্যই আপনার অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
তিনি মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, অসৎ উদ্দেশ্য যদি না থাকে, তাহলে কেন বিতর্কিত জায়গা মসজিদের নাম ব্যবহার করে ক্রয় করলেন। কারন, ওখানে পৌরসভার স্থাপনা ছিল, যে স্থাপনায় বসে পৌরসভার ট্যাক্স আদায় হতো। পরবর্তীতে ওই স্থানে সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মরহুম তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী ১৯৯৮ সালে পৌরসভার জন্য ব্যবহৃত দুই ময়লার ট্যাংকি নির্মাণ করেন। যা এখনো আছে।
টিনের চালা ও বেড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে গিয়ে দেখি, পার্শ্ববর্তী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই সম্পত্তিতে আসার রাস্তা করা হয়েছে। এছাড়াও এই সম্পত্তিতে ভূমিদস্যুদের নজর পড়েছে। তাই পৌরসভার তথা ১ লাখ ১৪ লোকের সম্পত্তি রক্ষার জন্য ও ওই স্থানটিতে নিরাপত্তার স্বার্থে টিনের বেড়া ও চালা দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি ভূমিদস্যুদের দ্বারা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে হাজীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন খাল দখলের বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে আনেন।
পৌরসভার এ্যাসেসর আবু ইউসুফ পৌরসভার সকল মামলার দেখা শুনা করেন। তিনি বলেন, পৌরসভার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওখানকার ১৩৮ শতাংশের অন্দরে ২৫ শতাংশ ভূমি পৌরসভার দখলে আছে। বাকি জায়গা সরকারের নামে রেকর্ড। পরবর্তীতে ভুলবশত সরকারের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এই রেকর্ড সংশোধনের জন্য সরকারের সাথে আমাদের মামলা চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, মসজিদ কর্তৃপক্ষ যদি কোন সম্পত্তি কিনে থাকে, তাহলে যার কাছ থেকে কিনেছে, তার কাছ থেকে বুঝে নেক। ওখানে ১৩৮ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। আর এই সম্পত্তির মধ্যে পৌরসভার মাত্র ২৫ শতাংশ। সুতরাং ওখানে বাকি অনেক জায়গা আছে, যদি মসজিদ কর্তৃপক্ষ কিনে থাকে, তাহলে যার কাছ থেকে কিনেছে, তার কাছ থেকে বুঝে নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ ও কাউন্সিলর মো. আজাদ হোসেন মজুমদার, প্যানেল মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রোকেয়া বেগম, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মমতাজ বেগম মুক্তা, মিনু আক্তার মিনু ও নাজমুন নাহার আক্তার ঝুমু, কাউন্সিলর মাইনুদ্দিন মিয়াজী, আলাউদ্দিন মুন্সী, সুমন তপাদার, মো. শাহআলম, কাজী মনির হোসেন, হাজী কবির হোসেন কাজী, সাদেকুজ্জামান মুন্সী, মো. শাহআলমসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply