প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেনের বর্ণাঢ্য জীবন

ড. মো. লোকমান হোসেন ১৯৬২ সালের ১ জুলাই চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী ইউনিয়নভুক্ত ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. আবুল বাসার মিয়া এবং মাতার নাম মিসেস হালিমা বেগম। তিনি নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে মতলবগঞ্জ জে. বি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট লাভ করেন। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ পিএইচ-ডি. এবং পরে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, হংকং, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ড. হোসেন ছাত্রজীবনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করেন। আশির দশকে নিজ এলাকায় একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে যুবসমাজকে শিক্ষা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে নানাবিধ সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড সফলভাবে পরিচালনা করেন। তিঁনি চঁাঁদপুর স্পুটনিক সায়েন্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং ক্লাবের পক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়ে অনেকবার পুরস্কার লাভ করেন।
ড. হোসেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগ (থিসিস গ্রুপ) থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কয়েকটি গবেষণা প্র্রকল্পে চাকরি করেন এবং পরে গ্লাস্কো বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন। অতঃপর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা, দশম ব্যাচ, মেধাস্থান দ্বিতীয়) ক্যাডার সার্ভিসে ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর যোগদান করেন। চাকরিকালে বিভিন্ন সরকারি কলেজ, যেমন- জগন্নাথ কলেজ, চাঁদপুর কলেজ, নবাব ফয়জুন্নেসা কলেজ, নোয়াখালী কলেজ, ঢাকা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেন্টার অব এক্সিলেন্স, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. হোসেন একজন প্রথিতযশা গবেষক। গবেষণাক্ষেত্রে তাঁর অনবদ্য অবদান অনস্বীকার্য। দেশ ও বিদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত (ওঝঝঘ সম্পন্ন) জার্নালে তার সর্বমোট ৯৩টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত দৈনিক পত্রিকায় ছোটগল্প, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, সমাজসংস্কার ও বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ লিখছেন। তারই কয়েকটি এই পুস্তকে সন্নিবেশিত করে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে জনসচেতনতা ও শিক্ষামূলক আর্র্টিক্যাল লিখে থাকেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তিনি অনেক সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত ন্যাশনাল পার্ক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান; ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা; এডিবির সহায়তায় মেঘনা নদী থেকে ঢাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই; পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ইকোট্যুরিজম ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বায়োডাইভার্সিটির প্রভাব নির্ধারণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি বেশ কয়েকটি পেশাজীবী সংগঠনের আজীবন সদস্য ও একনিষ্ঠ কর্মী। যেমন―আইইউসিএন (ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন), বাংলাদেশ ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি গ্রুপ, বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি, বার্ড প্রিজারভেশন সোসাইটি, ওয়াইল্ড লাইভ প্রিজারভেশন সোসাইটি, ওয়াইল্ড লাইভ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক মেরিটাইম ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্সেস, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক স্পেসিস সার্ভাইভাল কমিশন, সাউথ ইস্ট এশিয়ান রেপ্টাইল স্পেশালিস্ট, বাংলা একাডেমি, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি, জুলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট চেয়ারপার্সন, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সমিতি, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি, মতলব স্কুল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতি, মতলব ডিগ্রি কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সমিতি এবং জাতীয় পর্যায়ের দুটি গবেষণাধর্মী সংগঠনের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন।
ড. লোকমান হোসেনকে দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে পত্রিকার লেখক সুহৃদ হিসেবে সম্মাননা জানাচ্ছে পত্রিকা পরিবার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply