‘বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যসূচি অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তবনা পাঠাবো’

আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুজিববর্ষে প্রথমবার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৭ মার্চ) সকাল ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাদপুর পৌর মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পিযুষ কান্তি বড়ুয়া প্রমূখ।
জেলা প্রশাসকক তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেয়ার জন্যে। এই আয়োজনগুলো আগে খুব বেশি হয়নি বলেই অপর পক্ষটি বিকৃত ইতিহাস প্রচার করার সুযোগ পেয়েছে। স্বাধীনতা এমনি এমনি অর্জন হয়নি। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। পাঠ্যসূচিতে ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভূক্তি করা দরকার। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবী প্রস্তবনা আকারে প্রেরণ করবো।
তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতাম না। তিনি আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবরকভাবে প্রস্তুত থাকার জন্যে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি সবকিছু ব্যাখ্যা করেছিলেন। স্বাধীনতার কোন দ্বারপ্রান্তে আমরা এসেছি সেই কাহিনী আমাদেরকে বলেছিলেন। কাজেই এ ভাষনটির প্রেক্ষাপট জানানো এবং কেন ৭ মার্চ আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন প্রজন্মকে জানানো অনেক প্রয়োজন আছে। হঠাৎ করেই এদেশটি স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটি জীবন যুদ্ধ করছেন এ দেশের জন্যে এবং এদেশটিকে স্বাধীনতার পর্যায়ে উপনীত করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের প্রেক্ষাপট সস্পর্কে আমাদের এ প্রজন্মকে জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে আরো প্রচার ও প্রসার করা দরকার। এ কালজয়ী ভাষণ নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি এবং গর্ববোধ করা উচিত।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুবুর রহমান বক্তব্যে বলেন, আমরা এবারই প্রথম এ দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করছি। এই কারণে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের বছর হিসেবে এই ৭ই মার্চ আজকে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে আমাদের প্রতিটি ধমনীতে। একটি গণমাধ্যমে দেখেছিলাম একটি নিউজে ‘একটি ভাষন একটি দেশ’। ওইটা দেখেই প্রথমেই মনে হচ্ছিলো আসলে এর ভিতরে কি রয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সারাজীবনের পুঞ্জিভূত ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ ছিলো। বঙ্গবন্ধু ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো। তিনি ১৮ মিনিট তাঁর জাদুকরী বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ছিলেন, যা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আপামর জনতা শুনেছিলেন এবং হৃদয়ে ধারণ করেছিলন। অনেক দিনের স্বপ্ন, কল্পিত।
বঙ্গবন্ধু যেদিন ৭ই মার্চের ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন, সেদিন তাঁর সাথে থাকা তাঁর গাড়ির চালক কাজী গোলাম মোর্শেদ ছিলেন, যিনি এখনো বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে নামার পর কাজী গোলাম মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, “বঙ্গবন্ধু আপনার ফাইল কই?” তখন গভীরভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “আমার অন্তরেই সবকিছু আছে।” ৭ই মার্চের ভাষনটি ১৮ মিনিটের, ১১শ’ ৫টি শব্দ, ১০ লক্ষাধিক মানুষ শুনেছে। এর মধ্যে ৯টি শব্দ ছিলো ভুলেট। তাঁর ভাষণ কিংবা তাঁকে নিয়ে গবেষণা করা কঠিন বিষয়। বঙ্গবন্ধু নামক একটি সাগর সৈকতে আমরা নুড়ি কুড়াচ্ছি মাত্র। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না, আমরাও হয়তো এই চেয়ারে বসে কথা বলার সুযোগ পেতাম না।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আর এই বিজয়ের পিছনের যে অভিব্যক্তি, সেটা এখানে বক্তারা বলেছেন। এটা কিন্তু ৭ই মার্চের তাৎক্ষণিক কোন ভাষন নয়, এটা সারাজীবনের পুঞ্জিভূত একটা ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ছিলো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ৭মার্চ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এটি দীর্ঘ পরিকল্পনা, আন্দোলনের ফসল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো বাঙালি জাতির একটা ঠিকানা। সেই স্বপ্ন নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছেন। তিনি বাঙালি জাতিকে ধাপে ধাপে মুক্তিযুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। কেউ কেউ বলে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে বাঁশি ফুঁ দিছে, আর সবাই মু্ক্িতযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা ’৭৫ এর পরবর্তী সময়ে মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছে। আজকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। মানুষ স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল বলেন, যে মানুষটা সারাটা জীবন বাঙালি, বাঙালি বলে কেঁদেছিলেন, সেই মানুষটার নাম নিতে কেউ কেউ কার্পণ্য করে থাকের। এটি কতো বড় লজ্জার বিষয়। আপনার আমার সাথে দল-মতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার সাথে কোন বিভাজন থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেঈমানি করবেন না।
পৌর মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, ৭ মার্চের ভাষণটি আচমকা বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে আসেনি। যদি বলি এটি ছিল তার স্বাধীনতার প্রাক প্রস্তুতি ঘোষণা এবং ২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধুরই ঘোষণায় যা আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। জাতীয় দিবস হিসেবে দিবসটিকে ঘোষণায় তিনি সরকারের কাছে তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক একেএম দিদারুল আলম ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন সরকার। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply