বসন্ত এসে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
শীতের আড়ষ্টতা ভেঙে জেগেছে প্রকৃতি। দখিনা বাতাসে ভাসছে পাখিদের গান। হৃদয়ের ব্যাকুলতা নিয়ে এসেছে বসন্ত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে।
আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।’ পুরো বাংলাই আজ যেন তাই। এতদিন ধরে যার অপেক্ষা, সেই বসন্ত আজ সমাগত। আজ যে পহেলা ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন।
কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন আগ থেকেই। শুকনো পাতা ঝরে জন্ম নিয়েছে নতুন কচি পাতার। আজ সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত এসেছে নবযৌবনের ডাক দিয়ে। ছড়িয়ে দিয়েছে রঙের খেলা।
সোনালি রোদের ছোঁয়ায় পলাশগুলো আজ জেগে উঠবে। মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, মাতাল হাওয়া ছুঁয়ে যাবে তনুমন। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলের রঙেই আজ সাজবে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীরা পরবে বাসন্তী রঙের শাড়ি। খোঁপায় গুঁজবে ফুল আর হাতে পরবে কাঁচের চুড়ি। তরুণরাও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে নামবে বাংলার পথে ঘাটে। শুধু শহরেই নয়, বাংলার গ্রামীণ জনপদেও আজ ঝিরি ঝিরি বাতাসে ধরা দেবে বসন্ত।
এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে।
এ উৎসব এখন সব বাঙালির উৎসব। এ উৎসবটির একটি ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে।
মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম ও উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য।

শেয়ার করুন

Leave a Reply