বার্ষিক পরীক্ষা হবে না : প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের নির্দেশ

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
কোভিড-১৯ সংক্রমণের মুখে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তাই চলতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থায় মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সোমবার (২৩ নভেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম এই নির্দেশ দেন।
মুহাম্মদ মনসুরুল আলম স্বাক্ষরিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে দেশের সব বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার এবং প্রধান শিক্ষকদের।
এদিকে জানা গেছে, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী চলতি বছরের একই রোল বা ক্রমিক পরিচিতি নিয়ে আগামী বছর পরের ক্লাসে উঠবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের মুল্যায়নের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে তা তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। চলতি বছরের প্রথম আড়াই মাসের ক্লাস এবং কোভিড-১৯-এর সময় পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস হয়েছে। তখন তাদের ক্লাস টেস্ট নেওয়া হয়েছে, শিক্ষকরা পড়িয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মধ্যে সংসদ টেলিভিশন, বেতার, কমিউনিটি রেডিও এবং জুম প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ছুটির মধ্যে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়া আদায় করেছেন কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসব কিছুই মূল্যায়ন করা হবে। তবে নতুন শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আগের রোল নম্বরের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।
মহাপরিচালক জানান, এবার আনুষ্ঠানিক কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না-এটা মাথায় রেখেই মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আগের (এবারের) রোল নম্বরই ফলো করবেন। সবাই পরের ক্লাসে প্রমোশন পাবে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বয়স বিবেচনা করে মাধ্যমিকের মতো কোনো অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলমের নির্দেশনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরুতে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান চলমান ছিল। পরবর্তী সময়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি রেডিও এবং শিক্ষকদের স্ব-উদ্যোগে মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত ছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের তাদের স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এই নির্দেশনায় ফলাফল দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে এর আগে মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থায় মূল্যায়ন করবে শিক্ষার্থীদের। সব শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করতে হবে। মূল্যায়নটি করা হবে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করার জন্য, যাতে পরবর্তী ক্লাসে সেই দুর্বলতা দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী মূল্যায়নের ব্যবস্থা করবে। শুধু একটি গাইডলাইন দেওয়া হবে।
এদিকে এই নির্দেশনা জারির পর খুলনা সদর থানার শিক্ষা অফিসার শেখ মো. নুরুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলো কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তার একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনাটি দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে নমুনা হিসেবে সরবরাহ করছেন।
শেখ মো. নুরুল ইসলামের ওই নির্দেশনায় নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন সাজানো হয়েছে। এতে প্রত্যেক বিষয়ে ৫০টির কম বা বেশি প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে এসব প্রশ্নের উত্তর লিখবে। পরে শিক্ষকরা তা মূল্যায়ন করবেন।
খুলনা সদর থানা শিক্ষা অফিসারের ওই নির্দেশনায় দেখা গেছে, আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য দুই ঘণ্টার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে আগামী ২৫ নভেম্বর ইংরেজি, ২৮ নভেম্বর গণিত ও ৩০ নভেম্বর বাংলা পরীক্ষায় অংশ নেবে ।
এছাড়া তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য আগামী ২৫ নভেম্বর সকাল ১০ থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ইংরেজি, একই দিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলা, ২৮ নভেম্বর দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিজ্ঞান, ৩০ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষকরা অভিভাবকদের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাবেন এবং শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে পরীক্ষায় অংশ নেবে। পরে অভিভাবকরা প্রশ্নের উত্তরপত্র শিক্ষকদের পৌঁছে দেবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply