বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন ও প্রাসঙ্গিক কথা

অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন ::
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ জুন সারা বিশ্বে ১৯৭২ সাল থেকে প্রায় সকল দেশেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৯৬৮ সালের ২০ মে সুইডেন সরকার জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করে। পরিবেশ রক্ষার উপায় খুঁজতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
এই মহাবিশের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই মানুষ ও অন্যান্য জীবের বসবাস উপযোগী অনুকুল পরিবেশ রয়েছে। এই পরিবেশ তৈরির পিছনে যেসব ভৌত ও জৈব উপাদানের অবদান রয়েছে তার মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে বায়ু, পানি, মাটি, অনুজীব, উদ্ভিদরাজি ও প্রাণীকুল। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, বরফ গলা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ওজনস্তর ক্ষয়, অম্লবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়গুলো বর্তমানে পৃথিবীকে একটি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানান প্রাকৃতিক ও মানব ঘটিত দুর্যোগের কারণে নষ্ট হচ্ছে সম্পদ এবং হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে এমনসব জীববৈচিত্র্য।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমগ্র বিশ্বই এখন হুমকির মুখে। সারাবিশ্বে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ, দ্রুত নগরায়ণ, মাটি, পানি, শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, নানাবিধ রোগ বালাই, প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয় বিষয়টি বিশ্বব্যাপী একটি নতুন সংকটে পরিনত হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানান পরিবেশধর্মী বিষয়ের জন্য ৫ জুন ২০২০ বিশ্ব পরিবেশ দিবস সারা বিশ্বের জন্য তাৎপর্যপূণর্, এ বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “প্রকৃতির জন্য সময় (Time for Nature)।”
বাংলাদেশ এখন পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত। পরিবেশ দূষণের ফলে বাংলাদেশ প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে, ইতোমধ্যে আমাদের উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের নিম্নাঞ্চল ডুবতে শুরু করেছে। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন, শাহপরী দ্বীপ, নিঝুমদ্বীপ, ভোলা, দুবলারচর, সুন্দরবনাঞ্চল ও মনপুরাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার মানুষ উদ্বাস্তুু হিসেবে পরিণত হচ্ছে। এক সময়ে চাহিদার চেয়ে বেশী সবুজ বন নিয়ে বিস্তৃৃত ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রমাগত সবুজ বন নিধন, প্যারাবন উজাড়, বালি উত্তোলন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, কৃষি জমির পরিবর্তন, অপচনশীল প্লাস্টিকদ্রব্য ব্যবহার, ক্ষতিকর তামাক চাষ, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বা কার্বন নির্গমন, খাল ভরাট, নদ-নদী দখল, সাগর ও নদীতে দূষিত তেল নিঃসরণ, দূষিত বর্জ্য নিক্ষেপ ইত্যাদি পরিবেশ বিরোধী কর্মকান্ডে দেশের প্রকৃতিগত অবস্থা মুমূর্ষু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটি কঠিন সময়ের মধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ স্লোাগানটি সামনে রেখে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির নিমিত্ত এবারে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০ পালন করছে বাংলাদেশ। প্রকৃতির বিমুগ্ধতায় পরিপূর্ণ শ্যামল মাটি, সবুজ পত্রাঞ্জলী শোভিত বন, নদী, সাগর, হাওর, বাওর, দ্বীপাঞ্চল এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে বাংলাদেশ এক অনন্য ভূখন্ড। সবুজ ক্রান্তিয় অঞ্চল চিরহরিৎ সত্বা, প্রকৃতির নির্যাসের মধ্য দিয়ে এ দেশের জনগোষ্ঠীর পথচলা। মাঝে মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটায় বিপর্যস্ত হয়েছে এদেশের সম্পদ ও মানুষ। তারপরও প্রকৃতিগত কারণে বিপর্যস্ত দেশ পুনঃপুনঃ মাথা তুলে দাড়ায় প্রবহমান চির ঐতিহ্যের প্রিয় মাতৃভূমি-বাংলাদেশ। পরিবেশ অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন, ইটিপি প্রযুক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মৃত্তিকা দুষণ, পাহাড় কর্তন, গ্রীন ইকোনমি, শব্দ দুষণ, কার্বন ট্রেডিং, ইটভাটার পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি, টেকসই ট্রান্সপোর্টেশন, রিলোকেশন অব ইন্ড্রাট্রিজ, আরবান প্লানিং ইত্যাদি বিষয়গুলো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে থাকে। মাঠ পর্যায়ে জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ক গণসচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের নির্দেশনায় দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা, র‌্যালী, চিত্রাংকন, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, লিফলেট তৈরি এবং বৃক্ষমেলার আয়োজন করে গাছের চারা বিক্রি ও বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে যাতে প্রতিবেশ ও পরিবেশসম্মত বিধিব্যবস্থা প্রতিপালিত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। বনজ সম্পদ, পশুপাখি, জলজপ্রাণি, উদ্ভিদরাজির অবৈধ ও নির্বিচার সংগ্রহ, হত্যা ও ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম প্রতিহত করে প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়ার কথা বলে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সরকার কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলো হচ্ছে, “সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বন থেকে বৃক্ষ আহরণ ২০২২ সাল পর্যন্ত বন্ধ রাখা; সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমে স্থানীয় ও প্রান্তিক জনগণকে সম্পৃক্ত করে বন সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ গ্রহণ; বাংলাদেশের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনভূমি এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন রক্ষার কাজ এগিয়ে নেয়া; বনাঞ্চলসমূহকে বিভিন্ন ক্যাটগরীতে শ্রেনির্ভুক্ত করে বণ্যপ্রাণিসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহন; বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সংরক্ষণে সুন্দরবনের শতকরা ৫২ ভাগ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, বাকি ৪৮ ভাগ মৎস্য শিকার, মধু আহরণসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান; উপকূলিয় ও চরাঞ্চলে বনায়নের কর্মসূচি গ্রহন; শিল্প প্রতিষ্ঠানে বায়ু দূষণ রোধে এয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন বাধ্যতামূলক করা; বায়ুদূষণের মাত্রা সার্বক্ষণিক পরিবীক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্নস্থানে সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন; যানবাহনের দূষণ হ্রাসে ডিজেলে সালফারের মাত্রা কমিয়ে আনা; ঢাকা শহরে যানবাহনের চাপ ও দূষণ কমানোর লক্ষ্যে মেট্রোরেল ট্রানজিট চালু; গৃহের অভ্যন্তরে বায়ুদূষণরোধে প্রায় ৩০ লাখ উন্নত চুলা বিতরণ; হাউজিং প্ল্যান করার সময় সেখানেও জলাধারের ব্যবস্থা রাখা; ইটভাটাকে পরিবেশসম্মত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তির হাইব্রিড হফম্যান টানেল বা আধুনিক জিগ-জ্যাগ প্রযুক্তির ইটভাটায় রূপান্তর করা; ইট প্রস্তÍুুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৯’ জারি এবং কার্যকর করা; মোবাইল কোড বসিয়ে পাহাড় কাটা, কালো ধোঁয়া নির্গমন, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া সংক্রান্ত বিষয়, পলিথিনের বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায়; উন্নয়ন প্রকল্পে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ ও বনায়ন কর্মসূচি অর্šÍভুক্তকরণ; নগরে বক্স কালভার্ট নির্মান না করে খালের বা লেকের দুইধারে হাটার রাস্তা নির্মান; বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন ইত্যাদি।
সরকার উপকারভোগীদের মাধ্যমে পুনঃ বনায়নের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ তহবিল গঠন করেছে। সরকারি জমিতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যাকারী ব্যক্তি বা সংগঠনকে বনজ সম্পদ থেকে আহরিত লভ্যাংশের ৭৫ ভাগ দেওয়া হয়, বাকি ২৫ ভাগ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়। ফলে অবক্ষয়িত বনভূমি সংরক্ষণ ও জবরদখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে; নতুন প্রজন্মসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; এখন প্রত্যেকেই স্ব-স্ব স্থান থেকে প্রকৃতি রক্ষার জন্য এগিয়ে আসছে; সবাই এখন বুঝতে পারছে এই বন, নদী, পাহাড়, সমুদ্র না থাকলে আমরা বাঁচবো না, পৃথিবী বাঁচবে না। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ওজোন স্তর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সার্টিফিকেট অব অ্যাপ্রিসিয়েশন অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশ সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের নির্বাহী বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে জাতিসংঘ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।
২০২১ সালের মধ্যে রুপকল্প বাস্তবায়ন, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মা এবং ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কৃষি, শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের আবশ্যকীয়তা রয়েছে। তবে উন্নয়নকে টেকসই করতে সব পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সবার পবিত্র দায়িত্ব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বায়ুদূষণজনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বায়ুদূষণের ফলে অনেকেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বায়ুদূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, এর মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বায়ুদূষণজনিত রোগ প্রতিকারে প্রতিবছর স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। বায়ুদূষণ সংকট মোকাবিলায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
একবিংশ শতকে এসে সবচেয়ে বেশি প্লাষ্টিক দূষণ ঘটছে। প্রায় ৫০% প্লাষ্টিক দ্রব্য মানুষ মাত্র একবারের জন্য ব্যবহার করে, তারপর ছুড়ে ফেলে দেয়। বছরে যত পরিমাণ প্লাষ্টিক ছুড়ে ফেলা হয়, সেগুলিকে একত্র করলে আমাদের পৃথিবীকে চার বার আবর্তিত করে ফেলা যাবে! বর্তমানে যে পরিমাণ প্লাষ্টিক ব্যবহার করি তার মধ্যে মাত্র ৫% প্লাষ্টিক রিসাইকেল করতে পারি; Reduce, Reuse, Recycle শ্লোগানটি খুব একটা মানা হচ্ছে না। প্লাষ্টিকের মাইক্রোস্কোপিক কণা আমরা অজ্ঞাতসারে গ্রহন করি! প্লাষ্টিক আহারের কারণে প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন সামুদ্রিক পাখি ও কচ্ছপ এবং ১,০০,০০০ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী মারা যায়। বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছরে ১,৫০,০০০ টন প্লাষ্টিক সমুদ্রের মধ্যে ফেলা হয়। আমেরিকা একাই বছরে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন প্লাষ্টিকের বোতল ছুড়ে ফেলে। প্লাষ্টিক বোতল তৈরি করতে বার্ষিক ৭২ বিলিয়ন গ্যালন জল এবং এক বিলিয়ন প্লাষ্টিক বোতল তৈরি করার জন্য ২৪ মিলিয়ন গ্যালন তৈল প্রয়োজন হয়।
সবুজ পরিবেশই আমাদের মন চিরসবুজ রাখতে পারে। পরিবেশ দূষণ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। “পরিবেশ দূষণ বর্তমানে একটি মারাত্মক সমস্যা, শুধু আমাদের চেষ্টায় এই সমস্যার নিরসন সম্ভব, খুব সম্ভবত আমরাই শেষ প্রজন্ম যারা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারি”। আমরা যদি পরিবেশ দূষণ না কমাতে পারি তাহলে আমারা বাঁচতে পারব না। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী কোরনা ভাইরাসের সংক্রমনের প্রক্কালে পরিবেশের উপর মানুষের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকান্ড সাময়িক বন্ধ থাকায় পরিবেশ যেন অনেকটা নির্মল হয়ে এসেছে। আশা করছি এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেন ভবিষৎ পরিকল্পনা প্রণীত হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকলের উদ্দেশ্যে আহ্Ÿান রেখে বলেন, “প্রত্যেকে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ এবং ভেষজ গাছ লাগান, আমাদের সন্তানদেরও এই পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক কাজ করার পরামর্শ দিন; যে কোনো ‘উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে বৃক্ষরোপণ এবং জলাধার সৃষ্টি বা সংরক্ষণ করতে হবে; নদী ড্রেজিং করে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে; বিভিন্ন দ্বীপে ও উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে; খালের উপর বক্স-কালভার্ট না করে দুই ধার দিয়ে রাস্তা নির্মান করুন বা এলিভেটেড রাস্তা করা যেতে পারে, এতে খাল খালের মতোই থাকবে ফলে সেখানে নৌকা চলাচল করতে পারবে, পরিবেশ রক্ষা পাবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে এবং বায়ুদূষণ কমবে।”
আসুন আমরা সবাই মিলে শ্লোগান ধরি “পরিবেশ বান্ধব শিল্প গড়ি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি; প্রকৃতি ও মানুষের বন্ধন, কখনো করো না খন্ডন; দখল হলে নদী, জীবন হারাবে গতি।” পরিবেশ রক্ষার চেতনায় উদ্ভাসিত দিনটি আমাদেরকে নিয়ে যাবে নতুন দিনের কাছে, যেখানে সকল ধরণের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে, পরিবেশ দূষণ, কার্বন নিঃসরণসহ পরিবেশ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড থাকবে না। এই চেতনায় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী উঠে দাঁড়াবে সবুজের আচ্ছাদনে পরিপূর্ণ হয়ে। এভাবেই প্রকৃতির সুন্দরতায় ভরে উঠবে সারাবিশ্বের সকল প্রান্তর।
লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply