বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা করা হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হাইমচরসহ সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরাসরি ভাতা প্রেরণ কর্মসূচির উদ্বোধন
: নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জিটুপি পদ্ধতিতে সরাসরি তাদের ব্যক্তিগত একাউন্টে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সম্মানি ভাতা প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। এর ফলে এখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে বসেই তাদের ভাতা পাবেন। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানস্থল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলাসহ দেশের কয়েকটি উপজেলা প্রশাসন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি এই অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিল। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরীর পরিচালনায় হাইমচরের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ আহম্মেদ পাটওয়ারী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান মোল্লা, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ুন কবির প্রধানীয়া, হাইমচর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার সন্তোষ কুমার মজুমদার, হাইমচর প্রেসক্লাব সভাপতি খুরশিদ আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী এমএ মজিদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বেপারী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ বেগম, হাইমচর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মানোয়ার হোসেন মোল্লাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাইমচরের ১২৯জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এই সরাসরি সম্মানী ভাতার আওতায় এসেছেন। চাঁদপুর জেলার ৩৭৮৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এই সুবিধার আওতাভুক্ত হয়েছেন। এখন থেকে সারাদেশের ১ লাখ ৬৮ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই সম্মানি ভাতা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরের হাইমচরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘মুজিববর্ষের উপহার’ হিসেবে ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেমের সাহায্যে (এমআইএস) ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে ভাতার প্রচলন করেছে। এর ফলে কারো কাছে আর চাইতে হবে না, সরাসরিই তারা মোবাইলে টাকা পেয়ে যাবেন। কারণ, স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হন, তা হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা এবং তারপরে যারা আছেন ১২ হাজার টাকা পান, এরপর আবার কেউ ১৫ হাজার, কেউ ২০ হাজার, সেটা না করে সবাই ২০ হাজার টাকা পাবেন। আর ওপরে যারা অর্থাৎ পদবীধারীদেরটা একটু আলাদা থাকবে। সবাইকে একসঙ্গে ভাতা দেওয়াটা ভালো। কারণ, সবাই তো মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন শহীদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। নিহত ও যুদ্ধাহত পরিবার ২৫ হাজার করে পান। আর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবার মাসিক ৩৫ হাজার পান। বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রম ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীক ১৫ হাজার টাকা। এগুলোকে এত ভাগ ভাগ না করে মোটামুটি এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আছে, হিসাব-নিকাশ করে বা ট্রাস্টের সঙ্গে বসে তারা এটি ঠিক করে দেবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কষ্টে থাকবে, তাদের খাবার থাকবে না, বাড়ি থাকবে না, এটা হতে পারে না। আমি যতদিন সরকারে আছি, ততদিন এটি কখনও হতে পারে না। কাজেই তাদের প্রত্যেকের থাকার ব্যবস্থা করে দেবো। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তাদের আমরা রাষ্ট্রীয় সম্মান দিচ্ছি। তাদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তার মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জাতির কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। দুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করি। সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। মাসিক তিনশ’ টাকা করে শুরু হয়ে এখন তা ১২ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় ১২ হাজার টাকা কিছুই না। সেজন্য এতগুলো ভাগ ভাগ না করার কথা বলেছি। আমার মনে হয়, এটির বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন এবং আমরা আমাদের তরফ থেকে তাদের ভাতা দেবো। নিচের দিকে যে কয়টা স্লট আছে, সেগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে এসে আমরা ২০ হাজার টাকা করেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করবো।’
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাবদ গত ৫ বছরে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২ লক্ষ ৫ হাজার ১ শত ৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবার বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply