মতলবে রিক্সা শ্রমিকদের দুর্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক :
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশাচালক মো. হোসেন। মতলব বাজার রিক্সাষ্ট্যান্ড এলাকায় অন্যান্য রিকশাচালকরা যাত্রীর জন্য হাঁকডাক পাড়লেও তিনি নীরব। তার কাছে যেতেই বললেন, কই যাবেন? বরদিয়া আড়ংয়ের ভাড়া ৫০ টাকা বলাতেই রাজি হলেন। যেখানে অন্যান্য রিকশাচালকরা ৭০ টাকাতেও রাজি হননি। তাও আবার পায়ে চালিত রিক্সা। একান্ত আলাপচারিতায় জানা যায়, এক সময় বই পুস্তকের মলাট বাধার কাজ করতেন তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকেই বইয়ের ব্যবসায় ধস নামে। ফলে তার কাজটিও চলে যায়। পরিবার নিয়ে আর চলতে পারছেন না তিনি। বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন নভেম্বরে। থাকতেন মতলব কলেজ গেইট এলাকায়। বাড়ি ভাড়া তিন হাজার টাকা। বড় ছেলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আর মেয়ে ছোট। আয় কমে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি নলুয়া পাঠিয়ে দেন। কোন রকমে টেনেটুটে সংসার চলছিল তার। কিন্তু দ্বিতীয় দফা লকডাউনে আর পারছেন না সংসার চালাতে। এবার বাধ্য হয়ে প্যাডেলে পা দিয়েছেন। মো. হোসেন বলেন, আর পারি নারে ভাই। ক’দিন আর এভাবে থাকা যায়। ভাড়াও পাই না। চালাইতেও পারি না বেশি সময় ধরে। পায়ে টান পড়ে। প্রথম লকডাউনে একটা ভাড়া লইয়া যাইতাছি। ম্যাক্সিষ্ট্যান্ডে আটকাইলো। রিকশার সিট আটকাইয়া রাইখা কি এক বিপদে পড়লাম। আমাগো কয়েকজনের সিট নিয়া রাখলো কিন্তু কোনো বড় গাড়িরে চেকও করলো না। দুই ঘণ্টা আটকাইয়া রাইখা তারপর ছাড়লো রিক্সা। সারা দেশে বিধিনিষেধের মধ্যে চলছে মানুষের জীবনযাত্রা। বাধ্য হয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন রিকশা চালকরা। রিক্সা চালক রহমত, খলিল ও সোলেমান জানান, সরকারতো বলছে জীবন রক্ষার জন্য ঘরে থাকতে। চেষ্টা করি ঘরে থাকতে। ঘরে যে থাকমু খামু কি? সরকার এতো সাহায্য সহযোগিতা বলে করে আমরা তো পাই না। রাস্তায় বের না হইলে পরিবার নিয়া কি মরে যামু? অন্যদিকে কিস্তির টাকা শোধ করমু কিভাবে? রুজি নাই, টাকা নাই। কীভাবে সংসার চালাবো এই চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। এরপর ফের বলেন, গত তিনদিন ধইরা চারটা মুড়ি খাইয়া রোজা থাকি। শেষ রাইতে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাই। তাও চলতে পারতাছি না। দূরের বড় ভাড়াও পাওয়া যায় মাঝে মধ্যে। আগে যে ভাড়া আছিল ১০০ টাকা সেই ভাড়া এখন ৬০/৭০ টাকায় যাওন লাগে। রিক্সা বেশি, লোকও কম। এ অবস্থায় চলছে মতলবের বিভিন্ন সড়কের রিক্সা চালকদের জীবন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply