মনোনয়ন বাণিজ্য ও জেলা উপজেলা নেতাদের অশুভ প্রভাব ঠেকাতে আ’লীগের নয়া কৌশল

* তৃণমূল নেতাদের বাছাইকৃত প্রার্থীর মধ্যে নাম না থাকলেও মনোনয়ন সংগ্রহ করতে পারবেন
: নিজস্ব প্রতিবেদক :
জেলা ও উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রভাব বিস্তার এবং নানা বলয় থেকে উত্তোরণে চলতি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনসহ সবক’টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ একটি নয়া কৌশল নিয়েছে। যার ফলে মাঠ পর্যায়ের তথা তৃণমূলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মী যারা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ লালন করছেন, তাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেছে এই খবরে। উজ্জীবিত হচ্ছেন তারা। যদিও বিষয়টি বেকায়দা আর হতাশায় ফেলছে মনোনয়ন বাণিজ্যে ব্যস্ত কিছু তৃণমূল নেতা যারা নির্বাচনপূর্ব মুহূর্তে মনোনয়ন বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হন। যার জন্য দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা, জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের কাছে নিজের সেবা নিয়ে পৌছতে পারছেন না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারেন না। জনপ্রতিনিধি হতে গিয়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের দ্বারা। দলের সর্বোৎকৃষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও তারা এই বলয়ের কাছে হেরে গিয়ে হন মনোনয়ন বঞ্চিত। কিন্তু আগামীর পথে তথা আগামী নির্বাচনগুলোতে সেটি আর হচ্ছে না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চলমান পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠকে বসেছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ওই বৈঠকে উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা উঠে আসে। বিশেষ করে তৃণমূল সংগঠনের রেজুলেশনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম লিখিয়ে নিতে জেলা-উপজেলা নেতাদের অবাধ মনোনয়ন বাণিজ্য, তাদের কিংবা এমপি-মন্ত্রীদের কাছে লোক হিসেবে পরিচিত অজনপ্রিয় নেতাদের নাম রেজুলেশন করে কেন্দ্রে পাঠানো, স্থানীয় জেলা-উপজেলা নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা সিনিয়র নেতাদের সিন্ডিকেট করে প্রার্থী বাছাই করার বিষয়গুলো চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে দলে- এমন কথাগুলো উঠে আসে।
অন্যদিকে এরই যাতাকলে পড়ে উঠে আসতে পারছেন না দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতারা। সবচে বেশি প্রভাব পড়ছে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি। যার দৌড়ে পিছিয়ে থেকে নিরবে চোখের পানি ফেলে তৃণমূল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা। এই পরিস্থিতি বিবেচনা এনেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য মনোনয়ন বিক্রির বিষয়টি শিথিল করেছে। আর সেটি হচ্ছে, তৃণমূল থেকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রার্থীর নাম না পাঠালেও মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বা আগ্রহী প্রার্থীরা দলীয় তথা নৌকা প্রতীক পেতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সভানেত্রীর কার্যালয় এলে যেন তারা মনোনয়নপত্র ফরম পান সে ব্যবস্থাও রাখা হয়। তবে শর্ত থাকছে যে, এতে বিভাগীয়, প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক কিংবা কেন্দ্রীয় কোন নেতার সুপারিশ থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে তৃণমূল থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্তরা মাত্র তিনজনের নাম সিলেকশন করে পাঠালেই তাদের মধ্য থেকেই মনোনয়ন বোর্ড যে কোন একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতেন। আর তিনিই হতেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। কিন্তু এ নিয়মের পর এবার আর সেটি থাকছে না।
এদিকে চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এ খবরটি পৌছে গেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। তারা অনেকেই আশা করছেন, এই নিয়মে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার অনেক পরীক্ষিত নেতা যারা বহু দিন বহু বছর ধরে এমনকি কয়েক যুগ দলের জন্য নিবেদিত নেতা তারা সবরকম বলয় ভেঙে বিশেষ করে মনোনয়ন বাণিজ্যের বলয় থেকে নিস্তার পেয়ে নির্বাচনগুলোতে সুযোগ পাচ্ছেন। তাছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতেও এটি ট্রনিক হিসেবে কাজ করবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply