মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় মাদকের মামলা দিয়ে কাপড় ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার যোগসাজসে এক আওয়ামী লীগ পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের ৬ মামলার আসামী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জামাল গাজীর ষড়যন্ত্রে স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী জহির মিজিকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন তার বাবা। এমনকি কোন মামলা না থাকলেও বৃদ্ধ বাবা ও তার ছোট ভাইকে আটক করে ৭ দিন কারাগারে রাখা হয়। তাদের অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে জহিরকে আটক করা হয়েছে। পরে চাঁদপুর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম তার দু’ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা দায়ের করেন। এ অবস্থায় দ্রুত কাপড় ব্যবসায়ী জহিরকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তার বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্থানীয়রা। সেই সাথে মামলাটি অন্য কোন সংস্থা দিয়ে তদন্তেরও দাবি জানান তারা।
এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিম ওই পরিবারটি ২৮ ডিসেম্বর সোমবার চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ভাই জাহিদ মিজি।
সংবাদ সম্মেলনে তার বাবা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার আহম্মেদ মিজি বলেন, আমরা পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। কিন্তু এখন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি মাদক ব্যবসায়ী চক্রের ষড়যন্ত্রের কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অবস্থান নেয়ায় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জামাল গাজীর ষড়যন্ত্রে আমার পুরো পরিবার এখন ধ্বংসে পথে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে আমার ছেলে জহির চান্দ্রা চৌরাস্তায় মোবাইল ও কাপড়ের ব্যবসা করছে। সে সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। এ জন্য এলাকার প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীদের শত্রুতে পরিণত হয়। বিশেষ করে চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুরের জামাল গাজী বহু বছর ধরে এলাকায় ইয়াবা, গাজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে আসছে। তাকে পুলিশ কয়েকবার মাদকসহ আটকও করেছে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৬টি মামলা রয়েছে। কিন্তু সে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত তিন মাস আগে চান্দ্রা চৌরাস্তা থেকে মাদক সম্রাট জামাল গাজীকে প্রায় ২২০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এতে জামাল ক্ষিপ্ত হয়ে জহিরকে পুলিশের সোর্স হিসেবে সন্দেহ করে তার স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দেয়। পরবর্তীতে জামাল জেল থেকে বের হয়ে মাদক দিয়ে জহিরকে ফাসানোর জন্য পরিকল্পনা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলমের সাথে কন্ট্রাক্ট করে মাদকসম্রাট জামাল গাজী। পরে ওই কর্মকর্তাসহ জামাল তার সহযোগীদের নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর শহরের একটি হোটেলে খাবার খায় এবং মূল পরিকল্পনা করে। এ সময় জহিরকে ফাসাতে ২ লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট হয়। যার পরবর্তীতে মাদক ব্যবসায়ী জামালের লোকজনই ফাস করে।
তিনি বলেন, পরদিন ৫ ডিসেম্বর সকারে জহির বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে আসার পথে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদক সম্রাট জামালসহ তার ১০ জন সহযোগী জহিরকে ধরে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে জামাল তার পকেট থেকে নীল রঙের একটি ইয়াবার প্যাকেট জহিরের কোমরে গুজে দেয়ার চেষ্টা করে। জহির বিষয়টি বুঝতে পেরে সেই প্যাকেট পানিতে ফেলে দেয়। তখন জামালের এক সহযোগী তা উঠিয়ে মাদক ব্যবসায়ী জামালের হাতে দেয়। এ সময় জামালের ইশারায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে জহিরকে ধরে এবং জামালের হাত থেকে প্যাকেটটি নেয়। পরবর্তীতে জামাল কাপড় ব্যবসায়ী জহিরের কাছ থেকে ইয়াবা নেয়ার মিথ্যা কথা বলার পর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জহিরকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় মাদক সম্রাট জামালকে স্থানীয় লোকজন ধরলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে জহিরকে কম ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার কথা বলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম তার লোকজনদের মাধ্যমে আমাদের কাছে টাকা দাবি করেন। এদিকে জহিরকে আটকের পর তাকে অফিসে নিয়ে বেদম মারধর করে নির্যাতন চালায়। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরাসহ আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসে গেলে এ অবস্থা দেখে ওই কর্মকর্তার সাথে বাকবিতন্ডা হয়। এতে দিদারুল আলম ক্ষিপ্ত হয়ে বলে- আপনার ছেলেকে রিমান্ডে দিবো এবং আরেক ছেলেকেও ধরে নিয়ে আসবো। এরপর আমার ছেলে এবং আমার বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় জিডি করে রাতেই বাড়ি থেকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে ষড়যন্ত্র করে এই আওয়ামী লীগ পরিবারকে হয়রানির ও আটকের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য মিথ্যা মামলাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে স্থানান্তর করে অন্য কোন সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করা হোক। তাহলেই মাদক সম্রাট ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তার মুখোশ উন্মোচন হবে। সেই সাথে অবিলম্বে কাপড় ব্যবসায়ী জহির মিজিকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক এইচএম আহসান উল্যাহ, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, শহীদ পাটওয়ারী, শরীফ চৌধুরী, ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, মির্জা জাকির, দৈনিক ইলশেপাড়ের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, দৈনিক সুদীপ্ত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এমআর ইসলাম বাবু, দৈনিক শপথের সম্পাদক ও প্রকাশক কাদের পলাশ, সাংবাদিক মোরশেদ আলম, চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম মাসুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply