রামপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতির বিরুদ্ধে জমি-অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ

ভাই ও স্বজনদের আয়োজনে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন
: নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছিদ্দিকিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতি মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার জমি নিজের নামে লিখে নেয়া এবং মাদ্রাসার জন্য পাওয়া বিভিন্ন দান-অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন তার ভাই ও স্বজনরা। তার এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে তাদেরকে হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও করেন তারা। সেই সাথে তাদের বাড়ির মাঝখান থেকে এতিমখানাটির জন্য কেনা নির্ধারিত জমিতে সেটি স্থানান্তরের দাবিও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মফিজুলের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গত ৪১ বছরে এই মাদ্রাসা থেকে একজন শিক্ষার্থীও হাফেজ হয়ে বের হতে পারেনি বলে জানান তারা। রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপুর প্রেসক্লাবে মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন তার আপন ৪ ভাই, চাচাতো ভাই ও মাদ্রাসার শিক্ষকসহ আত্মীয়স্বজনরা। এর মধ্যে ২ ভাই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, মফিজুল ইসলামের নানা অপকর্ম, মাদ্রাসার অর্থ লুটপাট, মাদ্রাসার জমি নিজের নাম থেকে মাদ্রাসার নামে ফিরিয়ে দেয়া এবং নিয়ম বহির্ভূত মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হোক। মাদ্রাসাটি রক্ষায় ও উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
অভিযুক্ত মফিজুল ইসলামের ৪ ভাই ও ২ বোনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তার বড় ভাই নূরুল ইসলাম অভিযোগ বলেন, আমার ছোট ভাই মফিজুল ইসলাম ও তার দুই ছেলের অত্যাচারে আমরা ৪ ভাইয়ের পরিবারসহ বাড়ির লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ১৯৮৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং ৮৫ শতাংশ সম্পত্তি রেখে যান। তার ওয়ারিশ হিসেবে আছি আমরা ৫ ভাই ও ২ বোন যথাক্রমে মো. সুলতান আলম, মো. আলী আহমেদ, নূরুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, শাহ জাহান কবির, রহিমা বেগম, শাহিদা বেগম। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই আমার ভাই মফিজুল ইসলাম আমাদের ৪ ভাইয়ের সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছে এবং বিভিন্ন সময় গাছ-গাছালি ও ফল-ফলাদি তার ইচ্ছেমত ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। আমরা প্রতিবাদ করলেই আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে ও এলাকার কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক দিয়ে হুমকি-ধমকি প্রদান করে। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ ৩২ বছর তার অত্যাচারে আমাদের পুরো পরিবারসহ বাড়ির লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
অভিযোগে আরো বলেন, আমার বাবা মরহুম রিয়াছত আলী মুন্সি মৃত্যুর আগে বাড়ির সামনে মসজিদের জন্য ৩ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে যান ও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সাথে রামপুর ছিদ্দিকিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এরপর থেকেই আমরা সকল ভাইয়েরা মিলে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য দান অনুদান করি। আমরা চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে থাকায় প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার জন্য আমার ভাই মফিজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেই। কিন্তু সে এ সুযোগেই এতিমখানার নামে লাখ লাখ টাকা দান-অনুদান ও চাদা এনে মাদ্রাসার কল্যাণে ব্যয় না করে সে নিজে আত্মসাৎ করেন। মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলেই আমরা নাকি এতিমখানার বিরুদ্ধে এবং এতিমখানার ক্ষতিসাধন করি বলে এলাকা ও বিভিন্নস্থানে অপপ্রচার চালায়।
যেহেতু মাদ্রাসাটি বাড়ির মধ্যখানে সে জন্য আমরা ভাইয়েরা ও বাড়ির লোকজনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে সিদ্ধান্ত নেই মাদ্রাসাটি বদরখোলা বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন মেইন রাস্তার পাশে স্থানান্তর করার জন্য। এর ফলে মাদ্রাসা ফান্ডের টাকা দিয়ে আমার চাচাতো বোনের জামাতা মুখলেছুর রহমান মজুমদারের কাছ থেকে ১৬ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মাদ্রাসার সভাপতি আমার ভাই মফিজ মাদ্রাসার নামে রেজিস্ট্রি না করে তার নামে করে নেন এবং আমাদেরকে জানিয়েছেন মাদ্রাসার নামেই রেজিস্ট্রি হয়েছে। পরে সঠিক বিষয়টি জানতে পেরে মাদ্রাসার উক্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলা হলে সে নানা টালবাহানা শুরু করে এবং আমাদেরকে মাদ্রাসার প্রতিপক্ষ বানিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন লোকজন চাল, ডাল, গরু, ছাগল দান করলে আমার ভাই প্রতারক মফিজুল ইসলাম নামমাত্র মাদ্রাসায় দিয়ে বাকী সব ঢাকায় নিয়ে যায়। এসব বিষয়গুলো এলাকার মানুষও অবগত আছেন।
এছাড়া মাদ্রাসায় এ পর্যন্ত যত শিক্ষক তার অনিয়মের কথা বলছেন তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বাদ দিয়ে দেন। যার কারণে গত ৪১ বছরেও একজন শিক্ষার্থী এ মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয়ে বের হতে পারেনি। বর্তমানে মাদ্রাসায় ১০/১২জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার এসব অনিয়মের কারণে মাদ্রাসাটি উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, মফিজুল ইসলাম তার সুবিধামতো লোকজনকে মাদ্রাসার কমিটির বিভিন্ন পদে রেখে তাদের অজান্তেই স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে নিজের মনগড়াভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছে। তার এসব অনিয়ম নিয়ে কথা বললেই আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সব জায়গায় সুবিধা নিচ্ছে। অথচ সে মুক্তিযোদ্ধা নয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তের ভাই আরও বলেন, আমাদের পৈতৃক ও ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করার সময় আমার ছোট ভাই মফিজুল ইসলামের হুকুমে কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন বাধা দেয়। বিষয়টি আমরা ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষকে আপোষ মীমাংসার জন্য বলেন। চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর বিকেল ৩টার সময় মফিজের বড় ছেলে আরাফাত ছিদ্দিকি ও ছোট ছেলে তানভির ছিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাস প্রকৃতির লোক মিলে নির্মাণাধীন প্রচীর ভেঙে ফেলে। আমি ও আমার ছোট ভাই নূরুল ইসলাম বাধা দিতে গেলে আমাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় আমাদের ডাক-চিৎকার শুনে আমার বড় ছেলে মাছুম বিল্লাহ এগিয়ে আসলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে তার উপরও হামলা চালায়। একপর্যায়ে আরাফাতের লাঠির আঘাতে আমার ছেলের বাম হাতের আঙুল মারাত্মক জখম হয়।
এছাড়া তানভীর ছিদ্দিকি কিল ঘুষি মেরে তার বুক পকেটে থাকা ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং আমাদের কাজের মালামাল তছনছ করে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা আমাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি চাদপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মিলন, সোহেল রুশদী, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, এএইচএম আহসান উল্লাহ, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, চাঁদপুর সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুর রহমান, ইলশেপাড়ের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, আলোকিত চাঁদপুরের সম্পাদক জাকির হোসেন, চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম মাসুদসহ বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply