লকডাউনে যেসব উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়েছে সেগুলো সচল করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা ১৬ আগষ্ট সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
সভার শুরুতেই জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে এখন সাময়িক স্বস্তি। কিন্তু যতোক্ষন পর্যন্ত না এটিকে একটা ভালো পর্যায়ে না দেখবো ততোক্ষন পর্যন্ত আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির দারুন অবনতি, লকডাউন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ব্যস্ত দিন সবার যাওয়ায় আমরা উন্নয় সভা এবং অন্যসব সভায় সেসব নিয়েই কথা বলেছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু আজ এই সমন্বয় সভায় অন্যান্য উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করবো। তবে তারপরও আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়েই আলোচানা করতে চাই।
জেলা প্রশাসক বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ সভায় বলেন, করোনা বা লকডাউনের কারণে যেসব উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে গেছে সেগুলো সচল করুন।
এসময় তিনি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সিভিল সার্জন জানান, জেলায় সংক্রমনের হার কমেছে। আক্রান্তের হার ২৫ ভাগে নেমে এসেছে। যেটি এতোদিন অনেক উপরে ছিলো। এছাড়া গত ১৫ দিনে ৪৩ জন মারা গেছেন। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বা চাপ কমে আসছে। তিনি জানান, সোমবার জেনারেল হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ১১২ জন। যা গত সপ্তাহে অনেক বেশি ছিলো। তিনি জানান টেস্টিং কীড সংকট রয়েছে। সেটি আশা করি কেটে যাবে। আর টিকা নতুন কাউকে দেয়া যাবে না আপাতত। তবে সিনোফার্মা দ্বিতীয় ডোজ যারা নেবেন তারা ২৬ আগষ্ট পর্যন্ত পাবেন।
জেলা প্রশাসক আইসিইউ ও হাসপাতালের ভেন্টিলেটর সম্পর্কে সম্পর্কে জানতে চাইলে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, আইসিউ বেড স্থাপন কবে হবে তা বলতে পারছি না, তবে আইসিইউর জন্য ২ জন ডাক্তার ২ জন নার্সকে ১৫ দিনের ট্রেনিং এর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠাতে চিঠি দিয়েছে। চিঠির আলোকে সোমবার তারা গেছেব। জেলা প্রশাসক হাসপাতালের এসব বিষয়গুলো নিয়ে আমি প্রথমে অনেক কথা বলেছি, নিজের কিছু করার কর্তব্য বলে করেছি এখনো করছি। এছাড়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায়ও জেলা প্রশাসক আছেন। কিন্তু আপনাদের আন্তরিকতার অভাব দেখছি। আমাকে জানাতে পারেন অনেক বিষয়। কিন্তু তা আপনারা করেন না। যাক যেভাবে ভালো সেভাবে করেন। রোগিরা বা অন্যেরা যেন যেন বলতে না পারে তারা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দেখছে।
সভায় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, শহর রক্ষা বাধের জন্য যে স্থায়ী ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কাজ হওয়ার কথা, সেটি বোধহয় সহসা তথা এ অর্থ বছরে সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একই রকম প্রকল্প লক্ষীপুর জেলার কমল নগরেরটা হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এমনটা কী কারণে, আর এমন হলে তো আমরা আমরা ২ বছরই পিছিয়ে যাবো। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেন। আমাদেব মাননীয় সংসদ শিক্ষামন্ত্রীর সাথে এসব শেয়ার করুন। উনি এ ব্যাপারে অনেক আন্তরিক শুরু থেকেই। চাঁদপুরকে রক্ষা করতে তিনি অনেক বেশি কাজ করেন। নির্বাহী জানান, আগামী ২১ আগষ্ট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় আসবেন। এছাড়া সভাপতি রাজরাজেশ্ব, রঘুনাথপুরসহ বেশ কয়পকটি ভাঙনরোধ বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো প্রকৌশলী জানান, রাজরাজেশ্বরে স্থায়ী কোন কাজ করা সম্ভব না। সেখানে কাজ করলে থাকবে না। কারণ, উল্টো দিকটায় পদ্মা আরো বেশি উত্তাল। জেলা প্রশাসক জানান এসব নিয়ে সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলতে হবে। কি করে বাড়ি ঘর সেখানে রক্ষা করা য়ায়, তা করতে হবে। না হয় সেখানের মানুষের দুর্দিন বাড়বে। এছাড়া চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ বাধে ইমারজেন্সি কাজ করা যায় এমন জিও ব্লক রাখার জন্য বলেন। চাঁদপুর সেতুর টোল মওকোপের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে আনেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি এব্যাপার সড়ক ও জনপথ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রকৌশলী জানান, এ অরথ বছরে এটি ৩ বছরের জন্য ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা ইজারা দেয়া হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের গনদাবি, এটি টোল প্রথা উঠে যাক। এখন এটা ইজারা দিয়েছেন, তাই বলে টোল আদায় বিলুপ্ত করা যাবে না, তা ঠিক না। এ ব্যাপারে সচিব মহোদয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তোমরা জনপ্রতিনিধিদের ডিও নিয়ে এবং জনমানুষের দাবি উপস্থাপন করে আবেদন করো। আমরা দেখবো। তাই ইজারা দিলে জনস্বার্থের জন্য তা বাতিল করা যাবে না, এটি ঠিক না। তিনি খুব শীঘ্র এমন একটা আবেদন তৈরি করে এবং তার সাথে কি কি দরকার সেটা করার নির্দেশ দেন। সমন্বয় সভায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তাদের অনেক কাজের খবর, অর্থ বরাদ্দ, যুবকদের উন্নয়ন এসব ব্যাপারগুলো বিষয়ে প্রচার নেই। জেলা প্রশাসক উপরিচালকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আগেও বলেছি এখনো বলি, এসব বিষয়ে আন্তরিক হোন। এছাড়া সভায় মুক্তি যোদ্ধা কমপ্লেক্স, মডেল মসজিদ, খাদ্য, কৃষি, পরি সংখ্যান, পল্লী উন্নয়ন, ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ আগামী ২৫ আগষ্টের মধ্যে জেলেদের হালনাগাদ এবং নির্ভুল তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। অঞ্জনা এসময় চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় ,মেয়র জিল্লুর রহমান, হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম লিপন, ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়র আবুল খায়ের, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ, ডিডিএনএসআই শাহ আরমান আহমেদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগন এবং অন্যান্য বিভাগের প্রধানরা যুক্ত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply