লঞ্চে যাত্রীদের ভিড়, ভঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি

বাড়তি ভাড়া নিলেও লঞ্চের নিচতলায় ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন
ইব্রাহীম রনি :
করোনার সংক্রমণ বাড়লেও সরকারি নির্দেশিত বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না ঢাকা-চাঁদপুর নৌ-পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিলেও কম যাত্রী নিচ্ছে না লঞ্চগুলো। লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত যত যাত্রী আসছে তার সবই তুলে নিচ্ছে লঞ্চগুলো।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চের নিচতলায় গাদাগাদি করে নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। লঞ্চে ওঠানামার সময় ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়। স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি।
যাত্রীদের অভিযোগ, করোনা সংক্রমণরোধে বেশিরভাগ লঞ্চে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রাখার কথা ছিল। কিন্তু কোনও লঞ্চেই এসবের ব্যবস্থা নেই। ঘাটে এসব বিষয় নজরদারি করতে দেখা যায়নি নৌ-পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের।
লঞ্চের কয়েকজন স্টাফ জানিয়েছেন, লঞ্চের ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ায় লাভ হয়েছে মালিকপক্ষের। যাত্রী কম নেওয়ার বিষয়টি শুধু নিয়মের কথা। লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগ পর্যন্ত যত যাত্রী আসে সবাইকে লঞ্চে তোলা হয়। কতজন উঠেছে তার হিসাব নেই। করোনা সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধের বিষয়টি যাত্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মাথায় থাকে না।
লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, চাঁদপুর ঘাট থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো নিচতলার ডেকের চেয়ারে বসা যাত্রীদের কাছ থেকে ২৮০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। ডেকে বসা যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। যা আগে ছিল ১০০ টাকা। কিন্তু লঞ্চের নিচতলায় যাত্রীদের ঠাসাঠাসি। নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। তবে লঞ্চের প্রথম শ্রেণির ভাড়া বেশি নিলেও রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। সেখানে আসন ফাকা রেখে দূরত্ব বজায় রেখে বসছেন যাত্রীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরও শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না লঞ্চ থেকে নামার সময়।
সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো চাঁদপুর ঘাটে নোঙর করার আগেই যাত্রীরা নামার জন্য অস্থির হয়ে যান। কে কার আগে নামবে তা নিয়ে চলে প্রতিযাগিতা। শেষমেষ ধাক্কাধাক্কি করে নামেন সবাই।
ইমাম হাসান-২ লঞ্চযোগে ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসা যাত্রী জাহিদুল কবির বলেন, ঢাকা থেকে দাঁড়িয়ে এসেছি। ভাড়া নিয়েছে ১৫০ টাকা। ভাড়া বেশি হলেও যাত্রী নেওয়া হয় দ্বিগুণ।
লঞ্চে যাতায়াতের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা হাত ধোয়ার সাবান পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব কোনও লঞ্চেই নেই। মানুষ তো সামাজিক দূরত্বই মানে না, এসব দিয়ে কী হবে।
একই লঞ্চের যাত্রী মো. নাফিজ বলেন, লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। নামার সময় যাত্রীদের যে অবস্থা তাতে মনে হয় করোনা সংক্রমণ বাড়তে এটাই যথেষ্ট। এত যাত্রী পরিবহনের পরও ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ কী? করোনা পরিস্থিতিতে লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে।
বোগদাদিয়া লঞ্চের সুপারভাইজার আজগর আলী বলেন, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললেও কেউ শুনছেন না। মানুষ শুধু কার আগে কে লঞ্চে উঠতে পারবেন, নামতে পারবেন সে চিন্তা করে। মাস্ক রাখে পকেটে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যথেষ্ট চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে না।
তিনি জানান, প্রথম শ্রেণির ভাড়া আগে ছিল ৩০০ টাকা, এখন নিচ্ছে ৪০০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়া ১৫০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা। কেবিনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে এসি ডাবল কেবিনের ভাড়া নেয়া হচ্ছে লঞ্চ ভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। আর সিঙ্গেল এসি কেবিন ৬০০ এবং নন এসি ৫০০ টাকা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুর লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, লঞ্চগুলোতে এখন এমনিতেই যাত্রী কম। তারপরও মাঝেমধ্যে দু’একটি লঞ্চ যাত্রী বেশি নেয়। আমরা ঘাটে আছি সবসময়। স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি আমরা কীভাবে দেখবো। এগুলো দেখবে স্থানীয় প্রশাসন। তারা অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেবে।
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা কায়সারুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে লঞ্চের মালিকপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী হলেই লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে দিতে হবে। মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। হয়তো এখন এসব মানার প্রবণতা কিছুটা কমেছে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও আমরা এসব বিষয় নজরদারির চেষ্টা করছি। মাঝেমধ্যেই আমি ঘাটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করি। কিন্তু সরে গেলে লঞ্চগুলো বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলে। এক্ষেত্রে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীরা চাঁদপুর লঞ্চঘাট হয়ে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিদিন এ রুটে চলাচল করে প্রায় অর্ধশত ছোটবড় লঞ্চ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply