শাহরাস্তিতে অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা খুন, স্ত্রী জীবিত উদ্ধার

জাকির হোসেন খান :
চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌর এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে মো. নুরুল আমিন (৬৫) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সমাজসেবা কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। এসময় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন নুরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার (৫৫)।
গতকাল ১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে শাহরাস্তি উপজেলার পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ড নাওড়া গ্রামের(রেল ক্রসিং সংলগ্ন) আমিন সাহের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।


নূরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার (৫৮) গুরুতর আহত অবস্থায় সকালে পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকা একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
খবর পেয়েই পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী (কচুয়া- শাহরাস্তি সার্কেল), চাঁদপুর সিআইডি, পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ৩০ বছর পূর্বে উপজেলার টামটা ইউনিয়নের রাজাপুরা থেকে নাওড়া এলাকায় এসে বসবাস করেন এই পরিবারটি। পরে তিনি এ এলাকায় বসবাস সময় এক ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে সুখে জীবন কাটাচ্ছিলেন। একমাত্র ছেলে চাকরি নিয়ে ঢাকায় এবং দুই মেয়ে বিয়ে ও একমেয়ে লেখাপড়ার জনিত কারণে ঢাকা বসবাস করেন। এদিকে নুরুল আমিন লাকসাম থেকে ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার বরুড়া উপজেলা থেকে সমাজসেবা বিভাগের চাকরির শেষ করে অবসর জীবনযাপন করছিলেন। এরইমধ্যে দ্বিতীয় মেয়ে জান্নাতুন নূর মিলি গত ২৯ জুন রাত আটটায় মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর পহেলা জুলাই সকাল বৃহস্পতিবার ফোন দিলে মা-বাবা আর ফোন রিসিভ করছেন না। পরে তারা ওই এলাকার শামসুল আলম নামে তার বাবার বন্ধুকে ফোন দিলে তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে তার মাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি স্থানীয় সিদ্দিক পাঠান নিয়ে বিষয়টি দেখিয়ে ৯৯৯ ফোন দেয়। ওই সংবাদের ভিত্তিতে শাহরাস্তি থানা পুলিশের সঙ্গীয় ফোর্স সেখানে গিয়ে নুরুল আমিনের লাশ ও মারাত্মক জখম হওয়া কামরুন্নাহারকে উদ্ধার করে। এদিকে উদ্ধার হওয়া কামরুন্নাহারকে শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার দ্রুত ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়।
নিহত নূরুল আমিনের লাশ ভবনের ছাদে পাওয়া যায়। ওই সময় তার মুখে পায়ের মৌজা ও মাথায় কোপ দেয়ার আঘাত দেখতে পায়। এমনকি তার শরীরের সকল স্থানে পোকামাকড় দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত নূরুল আমিন নাওড়া পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ৭-৮ বছর পূর্বে বড়ুরা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী একই কার্যালয়ে কর্মরত থেকে ৬ মাস পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত হন।
এই বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের বন্ধু শামছুল আলম বলেন, মেজো মেয়ের কল পেয়ে দ্রুত তার বাড়িতে যাই ও পুলিশকে জানাই।
ছোট মেয়ে মিলি জানায়, ২৯ জুন মঙ্গলবার বাবার সাথে কথা হয়। আমার জন্য ব্যাংক থেকে ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
শাহারাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দল মান্নান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নুরুল আমিনের মরদেহ একতলা বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার করে এবং তার স্ত্রীকে ঘরের মধ্যে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের ঘরে সমস্ত জিনিসপত্র সঠিকভাবে আছে। কোনো কিছু এলোমেলো নাই, ডাকাতি হয়েছে বলেও মনে হয় না।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি খুবই রহস্যজনক। চাঁদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, পিবিআই, সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশের চারটি ইউনিট গভীরভাবে ঘটনাটি তদন্ত করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় বলেন, নুরুল আমিনের মাথায় ও মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং গলায় দাগ রয়েছে। ক্ষত জায়গায় পচন ধরেছে। মনে হচ্ছে ঘটনাটি দু-তিনদিন আগের। এ মুহূর্তে আর বিশেষ কিছু বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পোস্টমর্টেমের পর এ সম্পর্কে ভালোভাবে বলা যাবে। তিনি বলেন, মৃতদেহের অবস্থা থেকে আমরা ধারণা করছি দু’ দিন আগে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply