হাইমচরে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক
হাইমচর প্রতিনিধি :
চাঁদপুর হাইমচরে রাত পোহাতেই ঘরের আড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় মিয়া নেপাল এর স্ত্রী পারুলের লাশ। কেউ কেউ ধারনা করছেন আত্মহত্যা, আর অধিকাংশের দাবী এটা হত্যা। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করেছে হাইমচর থানা পুলিশ। এলাকায় বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা যায়, ১২ বছর আগে ২০০৮ সালে প্রেমের মাধ্যমে মিয়া নেপাল পারলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর তখন থেকেই পারুলের উপর চলে টর্চার। চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে নারায়ণগঞ্জে থাকার সুবাদে চার সন্তানের জননী স্ত্রী থাকা সত্বেও অন্য আরেকটি বিবাহ করে মিয়া নেপাল। স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতেও যুবতী মেয়ের সাথে চলে তার ফস্টিনস্টি। সেই থেকে প্রথম স্ত্রী পারুলের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন শারীরিক টর্চার ও মানসিক নির্যাতন ভার সইতে না পেরে চার সন্তানের জননী আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছেন।
অনেকেই দাবী করছেন, এটি আত্মহত্যা নয় বরং হত্যা। কারণ, প্রতিরাতেই ভিকটিমের ছেলে শাহাদাত (১১) মায়ের সাথে ঘুমায় কিন্তু গতরাতে তাকে দাদির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছেলে জানায়, তার বাবা তাকে দাদির কাছে চলে যেতে বলে। সকালে শুনে তার মায়ের ঝুলন্ত লাশ।
ভিকটিম পারুল বেগম (২৬) উপজেলার পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর গ্রামের আ. সাত্তার আখন (৫৬) এর ছোট মেয়ে। একই গ্রামের ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মোফাজ্জল হোসেন এর বাড়িতে ভাড়া সূত্রে থাকে। পারুলের চারটি সন্তান শাহাদাত (১০) সুমাইয়া (৭) আশ্রাফ (৪) মুসা (৪মাস)
জানা যায়, গত রাত ২ টায় নিহত পারুলের ছোট মেয়ে সুমাইয়া চিৎকার করলে মৃত আবুল হোসেন পাটওয়ারীর স্ত্রী মারুফা খাতুন ঝুলন্ত পারুলকে দেখতে পেয়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। তিনি জানান- আমি এসে দেখি ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলে আছে পারুল। তিনি আরও জানান, পারুল বেগম কিভাবে মারা যায় সেটা জানি না। তবে গত পরশু পারুলের স্বামী মিয়া নেপালকে আমরা বাড়িতে দেখেছি। তাদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এমনকি মিয়া নেপাল পারুলকে মারধরও করে।
এ ব্যপারে মিয়া নেপালের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সে জানায় পারুলের মৃত্যুর ব্যপারে সে কিছু জানেনা। সে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসতেও নারাজ। স্ত্রীর মৃত্যুতে তার কোনো আপত্তি নেই। সাংবাদিকরা তাকে ফোন করলে সে গালাগালিও করে। কিন্তু কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সে হাইমচর থানায় আত্মসমর্পণ করে। সে জানায়, আমি দীর্ঘদিন স্ত্রীকে কোনো ভরনপোষণ পাঠাই না, তার চলা সে কোনোভাবে চলত।
হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল ইসলাম খান জানান, স্বামীর অত্যাচারে ভিকটিম আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে। বাদীপক্ষের মামলা ও শাক্ষিগনের শাক্ষির ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সর্বোপরি বলা চলে এটি কোনো আত্মহত্যা নয় বরং পরিকল্পিত হত্যা। তাই স্থানীয়রা ও পারুলের নিকটাত্মীয় সকলেই প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় সঠিক তদন্ত করে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।