হাজীগঞ্জ বাজার ১০ জুন পর্যন্ত বন্ধ, লকডাউন বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে পুলিশ

শাখাওয়াত হোসেন শামীম :

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগামীকাল ২ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত এই ৯ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল সূর্যোদয় থেকে ওষুধের দোকান ২৪ ঘন্টা ও মুদি দোকান ২ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বাকী সব দোকান বন্ধ থাকবে। গতকাল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের এক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এই নির্দেশ অমান্যকারীদের প্রশাসনিক মাধ্যমে জরিমানা ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক হায়দার পারভেজ সুজন।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তিন মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। এছাড়া দোকান ভাড়া বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সভায় হাজীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত আব্দুর রশিদ বলেন, আগে জীবন। বেচে থাকলে ব্যবসা করা যাবে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি হাজীগঞ্জকে করোনামুক্ত রাখতে। আমরা বুঝি, আপনাদের দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ বিভিন্ন খরচের বিষয় আছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আগে জীবনকেই প্রধান্য দিতে হবে। তাই ব্যবসায়ী সমিতিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো। আপনারা সিদ্ধান্ত নিলে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির সভাপতি আসফাকুল আলম চৌধুরী বলেন, আমরা এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা ব্যবসা করি জীবনের জন্য। এখন ব্যবসা করতে গিয়ে যদি জীবন হুমকির মুখে পড়ে- তাহলে এ ব্যবসা করে কি হবে? তাই আমাদের নিজেদেরই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই আমি আশা করবো, আপনারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতে হবে। আমরা যেন চোর-পুলিশ খেলা না করি।
অতিরক্তি পুলিশ সুপার হাজীগঞ্জ সার্কেল আফজাল হোসেন বলেন, আপনাদের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আপনারা যারা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন- তারা কিছু দিনের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বাংলাদেশের জন্য একটি মডেল তৈরি করবেন। যেখানে সব জায়গায় প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সমিতিকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা যা করার দরকার তা করবো। আমাদের নিয়মিত যেসব কাজ তা আমরা চালিয়ে যাবো। ফুটপাতে কোন দোকন বসানো যাবে না। আমরা চাই এই ক্রান্তিলগ্নে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন হোক।

হাজীগঞ্জ পৌরমেয়র আ স ম মাহবুবুল আলম লিপন বলেন, সারা বাংলাদেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। লাল-হলুদ এবং সবুজ। আমরা সম্ভবত লালের দিকেই ধাবিত হচ্ছি। গতকাল আমাদের কয়েকজন ব্যবসায়ীসহ প্রিয় মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চারিদিকে মৃত্যুর সংবাদ শুনে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।
তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলবে। দোকান-পাট খোলা থাকবে। কিন্তু আমাদের এখানে তার চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। হয়তো বেচা-বিক্রি নেই কিন্তু তারপরও বেশি সময় কিছু দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানালাম, এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত। আমাদের অনেক ভাই বলেন, এখানে কারফিউ জারি করেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। আমরা আপনাদের সিদ্ধান্তকে স্যালুট জানাই। যে কয়েকদিনের ৭ দিন বা ১০ জন্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা মারা গেছে তাদের আত্মা যেন শান্তি পায়। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের সাথে আমরা কথা বলবো।
তিনি বলেন, হাজীগঞ্জকে করোনামুক্ত একটি এলাকা হিসেবে দেখতে পাবো। আগামী দিনে সুন্দর হাজীগঞ্জকে দেখতো পাবো বলে আশা করি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহীনি এবং পুলিশ ভাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন করোনা সংক্রমণরোধে। তিনি বলেন, আমরা আগে বাচি। তারপর দোকান ভাড়া কি দেব না দেব তা দোকান মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এখানে ৭ দিন, ১০ দিন এবং ১৫ দিন পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রস্তাব অনেকে দিয়েছেন। আমরা যদি আগামী ১০ দিন একটানা সব কিছু বন্ধ রাখি আমি বিশ্বাস করি হাজীগঞ্জ ভবিষ্যতে করোনামুক্ত হবে।
তিনি বলেন, ইউএনও করোনা পজেটিভ হওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মতে আমাদের কয়েকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে আমি কোথাও চলাচল করিনি। এই কয়েকটি দিন যে কতটা বিপর্যস্ত ছিলাম। এই সময়ে আমার ডায়াবেটিক বেড়ে গেছে। ছিলাম মানসিক চাপে। আমি বাচলে আমার পরিবার ভালো থাকবো। তাই আমরা এ ১০ দিন হাজীগঞ্জ বাজারকে কঠোরভাবে লকডাউন করতে চাই। যা সারাদেশে একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, কাচাবাজারের অবস্থা খারাপ। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আগামী তিন দিনের মধ্যে কাচা বাজারের ব্যবসায়ীদের যেসব পন্য আছে তা বিক্রি করে শেষ করতে হবে। আর পরবর্তী বাকী ৭ দিন হাজীগঞ্জ বাজারে কোন তরকারি সামগ্রী বিক্রি হবে না। এই কয়েকটি দিন আমরা ডাল-ভাত-ডিম খেয়ে আমরা চলতে পারবো।

সভায় বক্তব্য রাখেন হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মো. মাঈনুদ্দিন, হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল- আলম লিপন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, তদন্ত অফিসার ইনচার্জ আবদুর রশিদ, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশফাকুল আলম চৌধুরীসহ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply