৬১ লাখ টাকা ফেরত : ঢাকা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পেলেন অটোচালক সজিব

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে অটোরিক্সায় বিকাশ এজেন্টের ফেলে যাওয়া ৬১ লাখ টাকা ফেরত দেয়া অটোচালক সজিবকে উপহার হিসেবে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইংরেজী দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন এবং পত্রিকার পাঠকরা। ঢাকা ট্রিবিউনে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর অটোচালকের সহতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে আর্থিক সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ ও চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এইচএম আহসান উল্যাহর মাধ্যমে অটোচালক সজিবের হাতে ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা তুলে দেয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, শহীদ পাটওয়ারী, সহসভাপতি রহিম বাদশা, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম রনি, চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক তালহা জুবায়ের, চাঁদপুর প্রতিদিনের চীফ রিপোর্টার আশিক বিন রহীম প্রমুখ।

সহযোগিতা প্রদানের পর অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, চাঁদপুর শহরের বিকাশ এজেন্টের হারিয়ে ফেলা ৬১ লাখ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সজীবকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় ঢাকা ট্রিবিউন কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রত্যেকে যদি আমরা এভাবে সমাজে সততা এবং দায়িত্বশীলতা কে পুরস্কৃত করি এবং অভিনন্দন জানাই তাহলে সমাজে সৎ এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা ট্রিবিউন অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি সংবাদপত্র এবং তারা তাদের জায়গা থেকে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে যা অন্যান্য সবার জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
আর্থিক সহায়তা পেয়ে অটোরিক্সা চালক সজিব বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমি গরীব মানুষ। সবার মতো আমিও চাই মোটামুটিভাবে চলতে। ছোট বেলা থেকেই মা-বাবা আমাকে শিখিয়েছেন কারো কোন কিছুতে হাত না দেয়ার জন্য। সে শিক্ষাতেই আমি ৬১ লাখ টাকা পেয়ে ফেরৎ দিয়েছি।
তিনি বলেন, এ ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশনে এসেছে। তবে ঢাকা ট্রিবিউন অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। এখন আবার পত্রিকার পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাও করা হলো। এ জন্য আমি ঢাকা ট্রিবিউনের মালিক, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, আমি ঢাকা ট্রিবিউন থেকে পাওয়া এ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে গাড়ির ব্যাটারি জন্য একটি চার্জার কিনবো। আর বাকী টাকা মায়ের হাতে তুলে দেব।
অটোচালক জানান, ৬১ লাখ টাকা ফেরতের ঘটনার পর ভাগ্যে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। তবে স্থানীয় এবং দেশ-বিদেশে থাকা লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে সাধুবাদ জানিয়েছে। অনেকেই আবার জানতে চেয়েছেন, এর বিনিময়ে আমি কি পেয়েছি। তাদেরকে বলেছি আমি যা পেয়েছি- তাতেই খুশি। তিনি বলেন, অটোরিক্সাটির কাগজপত্র আছে, কিন্তু গাড়ির লাইসেন্স নাই। এতে করে পরবর্তীতে রাস্তায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হবে। তাই গাড়ির লাইসেন্স অথবা কোন পৌরসভা থেকে কোন কাগজ দিলে ভালো হতো।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিকাশ এজেন্টের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার মাসুদ হোসেন, মানি রানার মোক্তার হোসেন ও সুপারভাইজার সেলিম শহরের ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে নেমে ব্যাগভর্তি সেই টাকা নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় আসার পর ভুলক্রমে অটোরিকশাতেই টাকাগুলো রেখে নেমে যান তারা। প্রায় আধঘণ্টা পর মাসুদ বুঝতে পারেন টাকার ব্যাগটি তিনি অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন। পরে বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। এরই মধ্যে অটোচালক সজিব জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারী বাদল গাজীর মাধ্যমে টাকা পাওয়ার বিষয়টি মডেল থানা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ গিয়ে টাকাসহ অটোচালককে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে টাকাগুলো গুণে দেখা যায়, পুরো টাকাই ব্যাগে রয়েছে। এ ঘটনায় ওই যুবকের সততার প্রশংসা করেছেন পুলিশসহ বিভিন্নস্তরের মানুষজন। অটোচালককে তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভালো কাজের জন্য শুভেচ্ছা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এছাড়া বিকাশ এজেন্ট অটোচালককে একটি অটোরিক্সা কিনে দেন। এরপর শিল্পপতি এমএ হান্নান ২৫ হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply