মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ করলো ২৫ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

কামরুজ্জামান হারুন :

চাঁদপুরের মতলব উত্তর মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধের ৬৪ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় প্রকল্পের অভ্যন্তরে বসবাসকারী প্রায় ৫ লাখ লোক আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের বড় বড় গর্তের ভরাটের (সংস্কার)কাজ স্বেচ্ছায় বিনা পারিশ্রমিকে করেছেন মতলব উত্তরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

চাঁদপুরের মতলব উত্তরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি অবস্থিত। এতে রয়েছে ৬৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে মাটি সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বড় বড় ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় বেড়িবাঁধটি বর্তমানে হুমকির মু পড়ে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এখলাছপুর ইউনিয়নের নয়ানগর এলাকা থেকে শুরু হওয়া বাঁধটি বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালি মাটি দিয়ে তৈরী করা বাঁধটির বালি সরে গিয়ে এই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে মতলব উত্তর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৬৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে প্রায় ৩২ হাজার ১১০ একর ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর এ পর্যন্ত দু’বার বাধের পূর্বাঞ্চলে ভেঙে যায়। এতে কোটি কোটি টাকার ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয়। বর্তমানে বেড়িবাঁধের ৬৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে (পিচঢালাই) পাকা সড়ক রয়েছে।
জহিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, গত মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতি বারের ভারী বৃষ্টি ও নদীর পানির চাপে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ছেংগারচর পৌরসভার শিকিরচর গ্ৰামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আওতাধীনে ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। সকলের কথা চিন্তা করে আমরা মতলবের ২৫টি সামাজিক সংগঠন গতকাল (বৃহস্পতিবার ) অনলাইনে যুক্ত হয়ে একটি বৈঠক করি। শুক্রবার (২৩ আগষ্ট) সারাদিন বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তগুলো সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি।
নন্দলাপুর গ্রামের বাসিন্দা জুম্মান হোসেন জানান, বেড়িবাঁধের দূর্গাপুর, নন্দলালপুর, শিবপুর,ঠেটালিয়া, উদ্দমদি,ফরাজীকান্দি, জহিরাবাদ ও হাসিমপুর, এলাকায় বেড়িবাঁধে বড় বড় গর্ত দেখা গেছে। তাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্র জনতা মিলে গর্তগুলো ভরাট করেছি। আমরা বেড়িবাঁধটির বিভিন্ন স্থানে মেরামতের দাবী জানাই।
সাদা -কালো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সোহেল সরকার বলেন, অতিবৃষ্টির পানিতে বাঁধের অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত হয়ে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলাফেরায় দুর্ঘটনার আশংকা থাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্র জনতা মিলে মেরামত করেছি।
ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম বলেন, এটি নিঃসন্দেহ প্রশংসনীয় কাজ। এ মহতি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোকে অভিনন্দন জানাই।
এ বিষয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত পাল বলেন, গত দুইদিন যাবত ভারী বৃষ্টি ও নদীর পানির চাপে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত (রেইনকাট) সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) চাঁদপুর কার্যালয়ের থেকে তদন্ত টিম পর্যবেক্ষণ করে এসেছে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো দ্রুত সংস্কার কাজ করা হবে।

শেয়ার করুন