আমাদের লক্ষ্য ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে চুরমার করে দেওয়া : সমন্বয়ক আবদুল কাদের

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু ফ্যাসিবাদী হাসিনাকে বিতাড়িত করা নয়। আমাদের লক্ষ্য, তারা যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো তৈরি করেছে, তা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া।’

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিকের মতবিনিময় সভায় আবদুল কাদের এ কথা বলেন।

এ সময় ছাত্র-জনতার উদ্দেশে আবদুল কাদের বলেন, ‘ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিলেন। আমাদের অর্ধেক দায়িত্ব পালন হয়েছে। আমাদের বাকি দায়িত্ব হলো– যে দায়িত্বের স্বপ্ন নিয়ে আমাদের ভাইবোনরা শহীদ হয়েছেন; আমাদের অসংখ্য ভাইবোন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন; যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশ একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে। এ দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে। সরকার হবে জনতার সরকার। মানুষের বাক স্বাধীনতা থাকবে। এ দেশের পুলিশ প্রশাসন কোনও সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করবে না। এ দেশের মানুষের বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা থাকবে। এসব স্বপ্ন নিয়ে আমাদের যে ভাইবোনরা শহীদ হয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, আন্দোলন ও দেশ রক্ষার সংগ্রামের সময় নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করিনি। কখনও ভাবিনি, দেশ স্বাধীন হলে আমরা কী পাবো। ভেবেছি, দেশ স্বাধীন হলে আমি কথা বলতে পারবো। আমার মা-বোন-ভাই শান্তিতে ঘরে বসবাস করতে পারবেন। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

‘আপনারা দেখেছেন নোয়াখালীতে ভিন্নমতের লোককে ভোট দেওয়ার কারণে তৎকালীন সরকারি দলের বাহিনী কীভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছিল। আমরা শুধু ধৈর্য ধরেছিলাম। আমরা সুযোগ পেয়েছি এবং সেটার জবাব দিয়েছি।

এই সমন্বয়ক আগামী দিনের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী কাঠামো, ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দাঁড়াতে পারবে না। আমরা কাঠামোগত পদ্ধতিতে চলতে চাই। যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। যেখানে মানুষের ভোটাধিকার থাকবে এবং যে যার মতো করে মতামত প্রকাশ করতে পারবে।’

ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংগ্রামী বন্ধুরা, আপনারা দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আমি যখন শহীদ ভাইয়ের কবরের কাছে দাঁড়াই, আমি প্রতিবার তাদের কাছে নতুন করে শপথ করি– আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের কাঁধে দিয়ে গেছেন, সে দায়িত্ব আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো। বার বার আমি শপথ করছি, আপনারাও শপথ করুন– যে স্বপ্ন নিয়ে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবো না।

‘আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখন কোনও বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তা করিনি, নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে করেছি। কারও দিকনির্দেশনার জন্য আমরা অপেক্ষা করিনি। দেশ গঠনের লক্ষ্যে আমরা আবারও নিজ দায়িত্বে ঝাঁপিয়ে পড়বো। কোনও ভাই কিংবা নেতার জন্য অপেক্ষা করবো না। আমরা দেশের বন্ধু হয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাই।’

এ সময় আরও বক্তব্য দেন– কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সুমাইয়া আক্তার, হামজা মাহবুব, মো. মহিউদ্দিন, আলী আহম্মেদ আরাফ, খালেদ হাসান, তাসনিয়া নাওরীন ও জিয়া উদ্দিন আয়ান।

বক্তারা বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার সরকার। বিভিন্ন জায়গায় সমন্বয়কের নাম করে যে চাঁদাবাজি হয় তারা আসলে ভুয়া সমন্বয়ক। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনবো।’

চাঁদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা রবিউল আলম, নাদিম পাটওয়ারী, জোবায়ের ইসলাম, আব্দুল রহমান, হাসান মাহমুদসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন