এবার চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছে ভাড়াবাড়িতে!
প্রস্তাবিত স্থানটির ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার নির্দিষ্ট সময় পার হয়েও ২ মাস শেষ, টাকাও ছাড় মিলেনি
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবার বাড়ি ভাড়া নিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১১ আগস্ট এ লক্ষ্যে ভাড়ার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তারা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রস্তাবিত স্থান মেঘনাতীরের সদর উপজেলার ল²ীপুর মডেল ইউনিয়নের ৬২ একর জমি যেটির ভূমি অধিগ্রহণই হয়নি মামলা জটিলতায়, সেটিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারের স্থায়ী তথা নির্ধারিত স্থান হিসেবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে এর আশেপাশে বাড়ি ভাড়া নেয়ার প্রাধান্যের কথা বলা হয়েছে। এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আবদুল হাই সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য সরকার কর্তৃক ‘নির্ধারিত’ স্থানের কাছাকাছি অথবা চাঁদপুর শহরে কিংবা শহরের উপকণ্ঠে ১ সেপ্টেম্বর তারিখ হতে ৫৫০০ বর্গফুট আয়তনের ভবন ভাড়া প্রয়োজন। ভবন ভাড়া প্রদানে আগ্রহী মালিকদের আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে বাড়ির বিস্তারিত বর্ণনা ও ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ করে তার কাছে আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরো বিশ্মিত হওয়ার ব্যাপারটি হচ্ছে – নির্ধারিত স্থানটি কোথায়, তার নাম কি, তাও উল্লেখ করা হয়নি অজ্ঞাত এবং কোন না কোন কৌশলগত কারনে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য আবু তাহের বলেন, নির্ধারিত কিভাবে? তিনি বলেন এটা এখনো একোয়ার হয়েছে কি না বলতে পারছি না। একোয়ার হলে নির্ধারিত বলা যায়। যে স্থানটি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো ওই জমির মালিকদের সাথে সরকারের একটা এগ্রিমেন্ট হয়। এরপর ক্ষতিপূরণসহ তাদেরকে টাকা দেয়া হয়-এমন সিস্টেম আছে। এসব হলেই তখন বলা যায় নির্ধারিত। তবে এ ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্ত দেখতে হবে। এ জন্যই মঞ্জুরি কমিশন চিঠি লেখার সময় দু’টোই লিখেছে। ওই স্থানে যদি না হয় তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য উপযুক্ত স্থানে ভাড়া নিতে হবে। জেলা প্রশাসক যদি সেটি করে দিতে না পারেন তাহলে যেকোন একটি জায়গায় ভাড়া নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ মঞ্জুরি কমিশন বিষয়টি ওপেন রেখেছে। নির্ধারিত হলেতো মঞ্জুরি কমিশন শুধু নির্ধারিত স্থানেই বলে দিতো। ওই জায়গাটি যদি নির্ধারিতই হয়ে থাকে তাহলে অন্য কোন স্থান রাখার আর কোন সুযোগই নেই।
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয়- পাবলিক ইউনিভার্সিটি ম্যানেজম্যান্ট যেহেতু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে- তাই আপতত কোথাও তো শুরু করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কার্যক্রমগুলো শেষ হলে তখন তারাই বলে দিবে ‘এটা তোমাদের স্থান’। তখন উপযুক্ত স্থান আর থাকবে না, নির্ধারিত স্থানেই যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার একটি স্থানকে প্রস্তাব করেছে। তখন জেলা প্রশাসক, এসি ল্যান্ডসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা মূল্য নির্ধারণ করে। এরপরইতো ঝামেলা হলো। তাই এখন আদালতের জাজমেন্ট দেখলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাছিম আখতার বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বলেই প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। আর এই ভাষাটা দিয়েছে ইউজিসি। এটি আমার নিজের কোন ভাষা নয়।
তিনি বলেন, পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেখানে ভালো পাবো, সেখানেই বাড়ি ভাড়া নিবো। এদিকে স¤প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই বিশ্ববিদালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক তথা রাষ্ট কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণে যে ১৯৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে তা বহাল রাখে এবং রিট দায়ের করে সময় ক্ষেপন, জমির উচ্চ মূল্যচাওয়া নকল দলিল উপস্থাপনসহ কয়েকটি কারনে ১ কোটি টাকা জরিমানা করে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ আরো ২ মালিকপক্ষের।
এদিকে ঐ কালক্ষেপন ও সরকারি আরো প্রায় পৌনে ৪ শ কোটি টাকা বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টার বিষয়টি সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশও সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ শাস্ত্রয়ে আইনী প্রক্রিয়ায় অনড় ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনও সেলিম খান গংদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গার অনিয়ম খোঁজে পায়। এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ৪ নভেম্বর। ভূমি অধিগ্রহণের আইনের ধারায় বলা আছে, ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। না হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অর্থাৎ আপনা আপনিই ঐ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যাবে। চাঁদপু জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ জুন ২০২২ এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, ঐ নির্দিষ্ট তারিখের পরেও ২ মাস অনতিক্রান্ত হয়ে গেছে। আইনে বলা আছে, নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর জেলা প্রশাসক একটা গেজেট আকারে এই বিষয়টি প্রকাশ করবেন। কিন্তু সেটি জেলা প্রশাসন থেকে করা এখনও হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়াতেই যাবো। আইনে যা তার বাইরে হওয়ার কথা তো না। আমাদের কাছে কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টা আসুক তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।
আইনে যা তার বাইরে হওয়ার কথা তো না। আমাদের কাছে কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টা আসুক তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।
এদিকে প্রস্তাবিত স্থানের জন্য তিনবার সরকার নির্ধারিত ( প্রায় ১৯৪ কোটি) টাকা ছাড়ের চিঠি লিখেও তা পাননি ভিসি। তিনি বলেন,এ সংক্রান্ত রীট শুনানি হওয়ার মধ্যে এবং এর পরে শিক্ষামন্ত্রনালয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। যা প্রক্রিয়া তা করেছি। কিন্তু সাড়া পাইনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন শুরু যাচ্ছে। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু। এখন বাড়ি ভাড়া করে চালানো ছাড়া আপাতত কোন ব্যবস্থা নেই।
প্রসঙ্গতঃ মেঘনা নদী থেকে মাত্র ৭ শ মিটার দূরে এবং দেশের একটি বড় সেচ প্রকল্প বাধঘেষে এই বিশ্ব বিদ্যালয় না করার পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সাধারন জনগনের পক্ষ থেকেও মতামত আসে। এ নিয়ে পুরো জেলা এমনকি দেশ ব্যাপীও আলোচনার ঝড় উঠে। বিশেষ করে এটিকে পূঁজি করে রাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে ৪ শ কোটি টাকা লুটে নিয়ে যাচ্ছিলো বালু খেকো নামে সমধিক পরিরিচিত চেয়ারম্যান সেলিম খান।