চাঁদপুরে আবাসিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ, ভোগান্তিতে ২০ হাজার গ্রাহক
চাঁদপুরে আবাসিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ,
২ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান টার্মিনালে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাহাজ থেকে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চাঁদপুর জেলায় ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এদিকে একই কারণে গ্যাস ভিত্তিক চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্ধ্যা পর এটি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট ( রাত সাড়ে আটটা) লিখা পর্যন্ত গ্যাস সরবাহ স্বাভাবিক হয়নি।
এদিকে বাখারাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কুমিল্লা কার্যালয় থেকে ওইদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে চাঁদপুর জেলা শহরে বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। কিছু সময় আবার পুরোপুরি বন্ধ থাকে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় আবাসিক গ্যাস সরবরাহ। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে এমনটা গ্রাহক পর্যায়ে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আগাম ব্যাপক প্রচারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে গ্রাহকদের অভিযোগ।
চাঁদপুর ব্যাংক কলোনীর বাসিন্দা সাবরিনা রহমান বলেন, পুরো এলাকাতে গ্যাস না থাকায় মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। এছাড়া বর্ষা এবং বেশি শীত পড়লে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। বন্ধ হওয়ার আগে জানানো দরকার ছিল। আমরা জানতাম না। কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সতর্ক করা এবং মাইকিং করে জানানো প্রয়োজন। তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সারাদিন এমনকি এখনো চুলা জ্বালাতে পারিনি। শেষ বোনের বাসায় সিলিন্ডার গ্যাস আছে বলে সেখানে গেছি।
শহরের মমিনপাড়া এলাকার গৃহিণী লাবনী বলেন, আজ সকালে চুলায় আগুন দিতে গিয়ে দেখি খুবই কম গ্যাস উঠছে। সকাল ৯ টার দিকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে নাস্তা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দিনের খাবার তৈরিতে কোনমতে বিকল্প ব্যবস্থায় করেছি। রাতে বসে আছি। কিন্তু এ পর্যন্ত গ্যাস আসেনি।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় শহরের ১০ হাজার, হাজিগন্জে ৭ হাজার এবং মতলবে ৩ হাজার ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এদিকে একই কারনে বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর ১শ ৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়। তারা জানান, প্রতিদিন এই কেন্দ্রের জন্য দরকার ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এ ব্যাপারে ঐ কেন্দ্রের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইন্জিনিয়ার সাধন চন্দ্রের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও সেটি ব্যস্ত দেখায়।
বাখারাবাগ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চাঁদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী সমকালকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। চাঁদপুর এলাকার গ্যাসের একমাত্র সোর্স সাগরের এলএনজি। এটি মহেশখালী টার্মিনাল হয়ে কুমিল্লার লাকসামের বিজরা এলাকা থেকে চাঁদপুরে আসে।
তিনি বলেন, সাগর উত্তাল কিংবা প্রাকৃতিক বৈরীভাব দেখা দিলে টার্মিনাল ও জাহাজের নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজ থেকে এলএনজি টার্মিনালে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আবহাওয়ার বৈরীভাব চলে গেলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সন্ধ্যার পরপরই গ্যাস স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমাদের বলা হয়েছে পাইপে গ্যাস ঢুকানো হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত গভীর হতে চল্লেও গ্যাস আসেনি।