চাঁদপুর ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত বাতিলে ডিসিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি

# ২ বছর ৩ মাস পর সিদ্ধান্ত
# লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে না

ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী :

অবশেষে বহুল আলোচিত চাঁদপুর ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২ বছর ৩ মাস আগে করা ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়া চুড়ান্তভাবে বাতিলের অনুমোদন পেয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। গত ১ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রনালয়ের বাতিলের এই চুড়ান্ত চিঠি রোববার ( ৯ অক্টোবর) চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে বলে জানালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) মোসাম্মৎ রাশেদা আক্তার। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শাহনুর আলম স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিই চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের জন্য ২০২১ সালের জুলাই মাসে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের নেয়া ৬২ একর ভূমির অধিগ্রহণ ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়াটিই ভূমি মন্ত্রনালয় বাতিলের চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে দিলো। আর এতে করে ঐ ভূমি সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়া এবং ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়টি জেলা প্রশাসক ভূমি হুকুম দখল আইন ২০১৭ এর ১৪ ( ২) ধারা অনুসরণ করবেন। অর্থাৎ চুড়ান্তভাবে বাতিল করে এখন শুধু নিয়মানুযায়ী গেজেটটি প্রকাশ করবেন। রাশেদা আক্তার জানান, গেজেট প্রকাশে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তা বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেবেন। ভূমি মন্ত্রনালয়ের এই অনুমোদন মিলার পর গেজেট প্রকাশের জন্য আমাদের কাজ দ্রুত চলছে। চলতি সপ্তাতেই গেজেট সংক্রান্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান । ভূমি মন্ত্রনালয়ের এই চিঠির পর স্পষ্ট হয়ে উঠলো, এই প্রাক্কলন ব্যয় এবং অধিগ্রহণে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে আগের প্রাক্কলনেও বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে না। এখন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্ধারণের জন্য সম্পুর্ণ নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জানা গেছে, এই বহুল সমালোচিত জায়গাটিতেই আবার নতুন করে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করবার সুযোগও খোঁজতে শুরু করেছে সেলিম খান গংরা। কিন্তু ব্যাটেবলে মিলাতে পারছে না কিছুতেই! কারন ইতিমধ্যে জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রার অফিস ১৩৯ বিতর্কিত দলিলসহ সেখানের মৌজামূল্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। সেইসব দলিলের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি হয়েছে গত সপ্তাহে। এ বিষয়াদি সামনে এনে তদন্ত কমিটি তা বাতিল করে মৌজা মূল্য কমিয়ে আগের মূল্যে বা তা পুন : নির্ধারণ করতে প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।

এর আগে ২০২১ সালের ১৯ জুলাই তৎকালীন ডিসি অন্জনা খান মজলিশ ঐ জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা প্রাক্কলন ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা প্রত্যাশি সংস্থাকে সাব্যস্ত করে দেন। কিন্তু ভূমির মালিক বালু খেকো নামে পরিচিত ঐ এলাকার চেয়ারম্যান সেলিমখান গংরা ঐ জায়গায় ১৩৯ টি উচ্চমূল্যের দলিলসহ নানা জালিয়াতি করে মূল্য ৫ শ ৬০ কোটি টাকার মতো দাবি করে। কিন্তু জেলা প্রশাসক সরকারের বাড়তি এতো বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্চা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া এ ব্যাপারটি জানার পর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক সেলিম খানের এই অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং চরম ক্ষোব প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে সেলিম খান গংরা উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালত তার রিট খারিজ করে। পাশাপাশি সময় ক্ষ্যাপন, অসৎ উদ্দেশ্যে ১৩৯ দলিলের উচ্চ মূল্য নির্ধারণসহ আরো কিছু জাল জালিয়াতির জন্য সেলিম খানসহ ৩ রীটকারিদের আদালত ১ কোটি টাকা জরিমানা করে। এই সম্পুর্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সেলিম খান গংরা প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ মদদ এবং ছায়া থাকায় সেলিম খান ঐ জায়গাটি বেশি টাকায় নেয়ার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। নতুন করে পরিকল্পনা আঁটতে থাকে। ২০২২ সালে এসে বর্তমান জেলা প্রশাসককে দিয়ে এবং স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রারি অফিসকে কাজে লাগিয়ে মৌজা রেট বাড়িয়ে কিভাবে তাদের চাহিদামতো টাকায় নদী এলাকার ঐ ভূমিটিই নেয়া যায়, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে । এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঐ মৌজার দাম বাড়িয়ে দেয়া হয় কয়েকগুন। কিন্তু চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন করে দুর্নীতির মহা পরিকল্পনা অবশেষে ভেস্তে দিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানও । জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২১ আগষ্ট বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলরের ( ভিসি) প্রেরিত চিঠির আলোকে সাফ জানিয়ে দেন, বর্তমান মৌজার বাড়তি দামে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাসী সংস্থা কে দেয়া যাচ্ছে না। কারন হিসাবে জেলা জেলা প্রশাসক বলেন, আগের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটিই ভূমি মন্ত্রনালয়ে বাতিলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪ নাম্বার চিঠির স্বারকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানান।
জেলা প্রশাসক তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, ১২/২০-২১ নং এল এ কেসের অধীন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ প্রস্তাবাধীন জমির বর্তমান নতুন করে নতুন রেটে ব্যয় প্রাক্কলন প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, উল্লেখিত জমির চুড়ান্ত প্রাক্কলন ইতিমধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন , স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ এর ৮(৩)(খ) ধারা অনুযায়ী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা প্রত্যাশিত সংস্থা কর্তৃক অধিগ্রহনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব প্রাপ্তির পর চুড়ান্ত প্রাক্কলন প্রেরন করা হয়। ঐ চাহিত এল এ কেস স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ এর ১৪(২) ধারা অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রনালয়ে বাতিলের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই আইনের ধারায় বলা আছে, জেলা প্রশাসক গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে তা যে কোন সময়ে বাতিল করবেন। আর গত ১ অক্টোবর সেই চিঠিটিই ভূমি মন্ত্রনালয় জেলা প্রশাসককে চূড়ান্তভাবে পাঠালেন।
এদিকে এই চুড়ান্ত বাতিল হতে যাওয়া ভূমি এবং স্থায়ী ক্যাম্পাসটির জন্য পরবর্তী কী করনীয়, এ বিষয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি প্রফসর ড. নাছিম আক্তারের সাথে রোববার রাতে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন এয়ার পোর্টে আছি। কথা হলে পরে হবে।

শেয়ার করুন