চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের লড়াই
* উত্তাপ ছড়াতে পারেন সদস্য পদপ্রার্থীরা
* কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা ও ম্যাজিস্ট্রেট
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
আসন্ন চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এর নির্বাচন প্রথমবারের মতো ইভিএম এর মাধ্যমে আজ ১৭ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শনিবার রাত ১২ টা পর্যন্ত ছিল নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়। তবে প্রতিটি উপজেলায় ২টি করে ৮ টি উপজেলা পরিষদে ১৬ টি বুথে ৩টা করে সিসি ক্যামেরা থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনে মোট ১২৭৩ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে ২ চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ৩৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ১২ জনসহ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন।
জানা যায়, চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮টি উপজেলা, ৮৯টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভার ১ হাজার ২শ’ ৭২জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৭৪ জন ও নারী ২৯৯ জন। জেলার ৮ কেন্দ্রের মোট ১৬ টি বুথে ১ম বারের মতো ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। পৌরসভার মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্যরা এ নির্বাচনের ভোটার।
চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এ চেয়ারম্যান পদে মোট ৭জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাতিল করা হয়েছে। পরে চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ ওয়াদুদ ও প্রবাসী নাছির উদ্দিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী (মোবাইল) প্রতিক নিয়ে প্রচার-প্রচারনাও জনমতে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চেয়ারম্যান পদে ওচমান গনি পাটওয়ারীকে প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সাথে গোপনে কয়েকজন এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে নতুন মুখ হিসেবে নির্বাচন করছেন ব্যবসায়ী জাকির হোসেন প্রধানিয়া। তিনি (আনারস) প্রতিক নিয়েও প্রচার-প্রচারনা করেছেন কয়েকটি উপজেলা ও ইউনিয়নে। তবে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেননি বলে মনে করছেন ভোটাররা। এসব মিলে স্থানীয় জনগণ ও ভোটাররা মনে করছেন, নির্বাচনী মাঠে অভিজ্ঞ ওচমান গনি পাটওয়ারীর সাথে লড়াইটা হয়তো জমাতেই পারবেন না জাকির প্রধানীয়া। তবে কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের ছোট একটি অংশের গোপন আশ্বাস পাচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির। তাই এখন দেখার বিষয় কে হচ্ছেন চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত দ্বিতীয় চেয়ারম্যান।
আর সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পুরাতন বেশীরভাগই পরিবর্তন হতে পারে বলে ভোটাররা জানান। ইতোমধ্যেই কয়েকজন সদস্য প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। প্রতিটি সদস্য পদের বিপরীতে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এ কারণে নির্বাচনের মাঠে উত্তেজনা ছড়াতে পারেন সদস্যপ্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে চাঁদপুর জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী (মোবাইল) প্রতিক ও প্রবাসী জাকির হোসেন প্রধানিয়া (আনারস) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ মুকবুল হোসেন মিজি (টিউবওয়েল), মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মানিক (হাতি), জাকির হোসেন হিরু (বৈদ্যুতিক পাখা), মোঃ শাহ আলম খান (তালা), মোঃ ইকবাল হোসেন পলাশ পাটওয়ারী (অটোরিক্সা), মোঃ মাহবুবুর রহমান (উট পাখি), আবুল বারাকাত লিজন পাটওয়ারী (ঘুড়ি) প্রতিক পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (হাইমচর) ২নং ওয়ার্ড থেকে খোরশেদ আলম (তালা) ও এস. এম. কবির (টিউবওয়েল) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (ফরিদগঞ্জ) ৩নং ওয়ার্ড থেকে মশিউর রহমান মিঠু (তালা), মোঃ শাহাবুদ্দিন হোসেন (হাতি), মোঃ মিজানুর রহমান ভূইয়া (ঘুড়ি), আলী আক্কাস (টিউবওয়েল) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (মতলব দক্ষিণ) ৪ নং ওয়ার্ড থেকে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আল-আমিন ফরাজী (হাতি), জসিম উদ্দিন (টিউবওয়েল), মোঃ রিয়াদুল আলম (তালা), বাদল ফরাজী (উটপাখি) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (মতলব উত্তর উপজেলা) ৫ নং ওয়ার্ড থেকে মোঃ আলাউদ্দিন সরকার (তালা), মিনহাজ উদ্দিন খান (হাতি), মোঃ হাবিবুর রহমান (বৈদ্যুতিক পাখা), আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইসা (টিউবওয়েল) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (কচুয়া উপজেলা) ৬ নং ওয়ার্ড থেকে জোবায়ের হোসেন (হাতি), তৌহিদ ইসলাম (টিউবওয়েল), বিল্লাল হোসেন (বৈদ্যুতিক পাখা), আহসান হাবিব প্রাঞ্জল (তালা), মোঃ সালাউদ্দিন (অটোরিক্সা), শামসুল হক (উটপাখি) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (হাজীগঞ্জ উপজেলা) ৭নং ওয়ার্ড মোঃ জসিম উদ্দিন (তালা), মোঃ বিল্লাল হোসেন (টিউবওয়েল) ও আঃ রব মিয়া (হাতি) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে (শাহরাস্তি উপজেলা) ৮নং ওয়ার্ড থেকে মাহবুব আলম (বৈদ্যুতিক পাখা), মোঃ জাকির হোসেন (ক্রিকেট ব্যাট), মোঃ মনির হোসেন (টিউবওয়েল), মোঃ বিল্লাল হোসেন (অটোরিক্সা), মোঃ ইব্রাহিম খলিল পন্ডিত (তালা) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসাবে ১ নং ওয়ার্ড (সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর) থেকে আয়শা রহমান (দোয়াত কলম), জোবেদা মজুমদার খুশি (ফুটবল) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসাবে ২ নং ওয়ার্ড (মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিন, কচুয়া) থেকে শামছুন নাহার (দেওয়াল ঘড়ি), নাজমা আক্তার আখি (দোয়াত কলম), রোকেয়া বেগম (বই), তাছলিমা আক্তার (ফুটবল) ও রওনক আরা (টেলিফোন) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসাবে ৩ নং ওয়ার্ড (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি) থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসী (ফুটবল), মুক্তা আক্তার (দোয়াত কলম), রুবি আক্তার (বই), ছকিনা বেগম (মাইক), শিউলি আক্তার (হরিণ) প্রতিক পেয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন বলেন, একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। নির্বাচনে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রমাণ সাপেক্ষে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। আমাদের নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।