টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে চাঁদপুরের ইতিহাসে রেকর্ড গড়লেন ডা. দীপু মনি

শেখ হাসিনা ও মতিয়া চৌধুরীর পরের রেকর্ডটি যার

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুরে একমাত্র নারী প্রার্থী দীপু ডা. দীপু মনি। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে চাঁদপুর থেকে তিনবারের পর এবার মিলে চারবার চাঁদপুর থেকে সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। বর্তমান এমপি এবং শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্বে থাকা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচবার নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি এবার আবার নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন। । জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে ৩০ প্রার্থীর মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র দেওয়ার আগে নারীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রার্থী হিসেবে জানান দিলেও পরে আর তাদের আর দেখা যায়নি। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি সমূয়সূচি নির্ধারণ করেন নির্বাচনী এলাকার ২ উপজেলার ( সদর ও হাইমচর) ২০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ভোটারদের কাছে গিয়ে তার উন্নয়মূলক কাজের বর্ণনা দিয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচিত এই সফল নারী ৩৫ বছর পর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে আনার পর শেখ হাসিনা তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। পরে তিনি ২০১৪ তে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সেই সময়ে তিনি মন্ত্রী সভায় না থাকলেও ২০১৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। যে পদে তিনি এখনো অধিষ্ঠিত আছেন। আরো যতোটুকু জানা গেল, চট্টগ্রাম বিভাগ তো বটেই সারাদেশে নারী হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরীর পর দেশের কোন সংসদীয় আসন থেকে কোন নারী রাজনীতিকের টানা চারবার নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন একমাত্র ডা. দীপুমনি।

এবার এই আসনে দীপুমনিসহ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭জন। প্রার্থী হিসেবেও চূড়ান্ত হয়েছেন ৭ জন। যাদের ৬ জনই পুরুষ প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে দীপু মনির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ও ট্রাক প্রতীক নিয়ে রেদওয়ান খান বোরহান। এছাড়া, জাতীয় পার্টির অ্যাড. মহসীন খান, জাকের পার্টির কাওছার মোল্লা, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মিজানুর রহমান।
কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ কোন প্রার্থীই ভোটের সংখ্যায় তাঁর কাছেধারেও ছোঁতে পারেননি। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১ শ ৬৬ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. শামছুল হক ভূইয়া ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ১ শ ৯৭
নির্বাচনের দু’ দিন আগে সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভায় ডা. দীপুমনি বলেন, আমাকে গত ৩ বার নির্বাচিত করায় আমি বিগত ১৫ বছর আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আবারও সুযোগ দিলে চাঁদপুরকে নিয়ে আমার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। বিগত দিনে আপনাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করেছি তা বাস্তাবান করেছি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির চাইতে বেশি কাজ করা হয়েছে। রোববারের নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দেয়ার পর দিনশেষে দেখা গেলো, চারবারের এই নারী এমপি প্রার্থীকে ব্যালটযুদ্ধে চাঁদপুর – ৩ ( সদর ও হাইমচর) আসনের ভোটাররা তাঁকে চাঁদপুরের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর – ৩ আসনে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পরই তিনি চাঁদপুরকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় প্রায় ৩ শ ৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এতো বড় ধরনের প্রকল্প নদী ভাঙনরোধে ছিলো সবচেয়ে বড় প্রকল্প। পরবর্তীতে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট, চাঁদপুর – লাকসাম রেলপথের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, চাঁদপুর পুরানবাজার কলেজের বহুতল ভবনসহ সদর ও হাইমচরের স্কুল কলেজ মাদরাসার পাকা অবকাঠামো নির্মাণ এবং এসবের আধুনিককায়ন, মেরিন একাডেমি, চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আইসিও ও অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন, সড়ক নির্মানসহ বাস্তবায়িত দৃশ্যমান বিপুল সংখ্যক মেগা প্রকল্প এবং বাস্তবায়নাধীন শহর রক্ষা বাঁধ নির্মানে ৮ শতাধিক কোটি টাকার প্রকল্পসহ ১৫ বছরে তিনি ১১ হাজার ৫ শ ৪৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চাঁদপুর এবং হাইমচর এলাকায় নিয়েছেন। যা বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে বা পরে কোন একজন সংসদীয় জন প্রতিনিধির মাধ্যমে হওয়া প্রথম।
তিনি এই নির্বাচনে জন সংযোগে সবসময়েই বলেছেন, চাঁদপুরকে নিয়ে আমার একটা স্বপ্ন আছে। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি সবসময়ই তাঁর এই বিপল উন্নয়নে যাঁর কাছ থেকে সবচাইতে বেশি সহযোগী পেয়েছেন, তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার। ডা. দীপুমনি সবসময়ই একথা স্পষ্টভাবে পরম কৃতজ্ঞতায় স্মরন করেছেন।
এদিকে টানা চারবার তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ায় রোববার রাত থেকেই রাজনীতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষকসহ নানা পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। নির্বাচনশেষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, যুবলীগ,যুব মহিলা লীগ ছাত্র লীগের নেতা কর্মি এবং হাজারো সমর্থকরা আনন্দ মিছিল করে ডা. দীপুমনির কদমতলাস্থ বাস ভবনে যায়। সেখানটা তারা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে।

শেয়ার করুন