সাংবাদিকতা পেশা একটি মহান পেশা : রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের দলিল হস্তান্তর
জহিরুল ইসলাম :
এদেশের মানুষ ও ইতিহাসের জন্য আজ একটি বিশেষ দিন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে আমার জন্মভূমিতে এসে একটি সমৃদ্ধ প্রেসক্লাব যেখানে শিক্ষিত, মার্জিত ভালো অডিয়েন্স, যেখানে অফিস হবে, প্রেসক্লাবের ভবন হবে, যেখানে যুগের পর যুগ নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা বসবেন পুরাতন সাংবাদিকগণ সেখানে গিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন। ৫৩ বছর পর আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছি তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম না আমি বেঁচে থাকবো। আজকে আমি আমার জন্মভূমিতে এসে বক্তব্য রাখতে পারছি এজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি আমার এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আজকের এই দিনে আমি আহ্বান রাখছি আমার সব ভালো উদ্যোগে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন।
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের দলিল হস্তান্তর ও দাতা সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে বেলা তিনটায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উক্ত অনুষ্ঠান শুরু হয়।
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত।
সংবর্ধনা দেয়া হয় শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা কালীন সভাপতি অ্যাড. ইলিয়াস মিন্টুকে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াসির আরাফাত, বিশিষ্ট সমাজসেবক আব্দুল হান্নান, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিস লিমিটেডের সিইও মোঃ আনোয়ার হোসেন, শাহরাস্তি পৌরসভার মেয়র হাজী আবদুল লতিফ, শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেড এম আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম আরো বলেন, আমাদের সম্পদ দিয়ে পাকিস্তানিরা নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলেছে বাংলার মানুষ ছিল অবহেলিত। স্বাধীনতাকে কখনোই দ্রব্যমূল্য দিয়ে যাচাই-বাছাই করা যাবে না। স্বাধীনতা এক অমূল্য সম্পদ যা মহান আল্লাহ পাক মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন। যে জাতি যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে। এই জাতির নতুন প্রজন্ম যুদ্ধ করেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে সে বিশ্বাস আমার আছে। জাতিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে হবে। আর এখানে মূল ভূমিকাটা হলো কবি শিল্পী সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। পৃথিবীর যত দেশ উন্নতি লাভ করেছে গণতন্ত্র যেখানে সু প্রতিষ্ঠিত, তার পিছনে রয়েছে গঠনমূলক বস্তুনিষ্ঠ সৎ সাংবাদিকতা। এই সৎ সাংবাদিকতা না থাকলে পৃথিবীর কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। উন্নত দেশগুলোতে জনগণের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকগণ সরকারের ভুল ত্রুটি তুলে ধরছে। মানব সভ্যতায় গণতন্ত্রের বিকল্প এখনো আসেনি, যেভাবেই হোক এই গণতন্ত্র দিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার বিকল্প নেই।
আজকের এ অনুষ্ঠান এতোটা সুন্দর যে আমি শাহরাস্তির মধ্যে দীর্ঘদিন পর এটি দেখতে পেলাম। এজন্য শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দেশের গরীব, অসহায় মানুষের স্বার্থটা আমাদের দেখতে হবে। আমাদের মতপার্থক্য থাকতে পারে এবং যত কিছুই থাকুক আমাদের একত্রে কাজ করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমার কাছে ভালো সাংবাদিক যেই দল-ই করুক আমি তাকে সম্মান করবো, সমর্থন করবো, তাকে সহযোগিতা করবো।
তিনি তাঁর বক্তব্যে এ সময় গুরুত্বপূর্ণ নিউজের ফলোআপ করার গুরুত্ব আরোপ করেন। গরীব অসহায় মানুষের পক্ষে টাকা খরচ করে ভালো আইনজীবী পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু সাংবাদিকরা যদি তার পাশে দাঁড়ায় তাহলে তার মনে সাহসের সঞ্চার হবে। সাংবাদিকতা আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে রিপোর্টিং কিন্তু তা নয় এর সাথে মানুষের জীবনের সুখ দুঃখ মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের ইতিহাস জড়িত আছে। সাংবাদিকরা যদি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা না করতো তাহলে মানব সভ্যতার এতো দ্রুত পরিবর্তন হতো না। সাংবাদিকতা পেশা একটি মহান পেশা। কেউ কেউ এটিকে কলঙ্কিত করে। কিন্তু কয়েকজন ব্যক্তির জন্য পুরো সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করা সঠিক নয়। সাংবাদিকরা এখানে অনেক ভূমিকা রাখেন। আমি সাংবাদিকদের রিপোর্ট পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই আমি নিজেই ফলোআপ করি। আমি আবারও বলবো শাহরাস্তির সাংবাদিক জগত অত্যন্ত উন্নত, এখানে কোন ব্লাকমেইলিং হয় না, এখানে হলুদ সাংবাদিকতা খুবই কম। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে আগামী দিনগুলোতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শাহরাস্তিতে আমরা সুন্দর একটি প্রেসক্লাব গঠন করবো। আমি শাহরাস্তি প্রেসক্লাবকে সমস্ত সহযোগিতা দিব। একটি সুন্দর ভবন, সেখানে পরিবেশটাও ভালো থাকবে। আমরা সেখানে সবাইকে স্বাগত জানাবো । আমরা সবার জন্য দরজা উম্মুক্ত রাখবো। আমরা সকল ক্ষেত্রে শাহরাস্তি উপজেলাকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, এরপর শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের লোগো ও শাহরাস্তির মানচিত্র খচিত সম্মাননা স্মারক প্রধান অতিথির হাতে তুলে দেন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্মকার মিঠুন। একই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের হাতে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্যের সম্মাননাপত্র তুলে দেওয়া হয়।
সুশৃংখল মনোরম পরিবেশে বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নিজস্ব সম্পত্তির ঐতিহাসিক দলিল শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের পক্ষে গ্রহণ করেন মেজর অবসর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
এ সময় তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের ভূমির দলিলটি খুলে দেখেন এবং সকল সাংবাদিকদের নিয়ে ফটো সেশনে অংশ নেন। এরপর প্রধান অতিথি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত কাজী শাহাদাতের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট ইলিয়াস মিন্টু প্রধান অতিথির হাত থেকে সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন। এরপর একে একে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের দাতা সদস্যদের সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেন, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
আসরের নামাজের পর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান চৌধুরী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভানেত্রী নাছিমা আক্তার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি এ এইচ এম আহসানুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শাহরাস্তি পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন পাটোয়ারী, শাহরাস্তি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মোঃ মোস্তফা কামাল, শাহরাস্তি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল মান্নান মোল্লা, মেহের ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান, সূচীপাড়া ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। এছাড়াও প্রশাসনিক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক, শিক্ষক ও বিশিষ্ট জনরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। এরপর অতিথি ও আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গ একসাথে ইফতার মাহফিলে শরিক হন।