হাজীগঞ্জে হাত পা বাঁধা স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, আলামত জব্দ

* ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম

মুন্সি মোহাম্মদ মনির/শাখাওয়াত হোসেন শামীম :

চাঁদপুরের জেলার হাজীগঞ্জে স্বামী স্ত্রীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড়কুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, উত্তম বর্মণ (৬২) এবং তার স্ত্রী কাজলী রাণী বর্মণ (৫৫)। এ ঘটনার সাথে জড়িত কেউ আটক হয়নি। তবে কিছু তথ্য এবং আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। থানা পুলিশ ছাড়াও কাজ করছে পিবিআই, সিআইডিসহ গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনশেষে ঘটনা সম্পর্কে কথা বলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, সকালে ফুল তুলতে গিয়ে এক প্রতিবেশী দেখেন, তারা ঘুম থেকে ওঠেননি। অনেক ডাকার পর তাদের সাড়া-শব্দ না পেয়ে দরজা খোলা দেখে বাড়ির অন্যদের খবর দেন। পরে ভেতরে ঢুকে তারা দু’জনের হাত-পা বাঁধা মরদেহ দেখতে পান এবং জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান জানান , ওই বৃদ্ধ দুই বিয়ে করেছিলেন। একজন মারা গেছেন। এক স্ত্রীকে নিয়ে নারায়নগন্জে ব্যবসা করেন জনৈক দুলাল দাসের বাড়িতে পাহাড়াদার হিসেবে তারা থাকতেন। ।

পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এ বিষয়ে ঐ ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মজিব আরো জানান, এলাকায় চোর-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে চলছে। চুরির বা ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।


এদিকে হাজিগন্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক দ্বন্দ্বে স্বামী-স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে, বা অন্য কোন দুর্বৃত্তরা অন্য কারনেও হত্যা করতে পারে । দুর্বৃত্তরা ঐ ঘরের জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। তিনি জানান, তাদের হাত পা-বেঁধে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে ধারনা করছেন তিনি। ওসি আরো বলেন, আমাদের এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দে বলেছেন, ওই দম্পতিকে হাত–পা বেঁধে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনিও বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। এদিকে সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় ঘটনাস্থলে আসেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একজন নারী ও পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের সাথে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে। আমরা ক্রাইম সিন থেকে বেশ কিছু আলামত জব্দ করেছি। এই ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে কিছু তথ্য পেয়েছি। এটি ধরেই তথ্য যাচাই বাছাই করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য এখন থেকেই জেলা পুলিশ কাজ করছে। এটি শুধুই চুরির উদ্দেশ্যে হলো কিনা বা অন্য কিছু এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অর্থ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় জানান, না এটি আলামত দেখে একেবারে নিশ্চিত হয়ে আমরা বলতে পারছি না যে এটি শুধু ঐ রকম কিছু । বিশেষ করে কাজলী বর্মণকে যে অবস্থায় দেখা গেছে, তাতে ধারনা হয় তাকে মৃত্যুর আগে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি আমরা ময়না তদন্ত এবং অন্যান্য যেসব আলামত আমরা পেয়েছি তা দেখে আরো স্পষ্ট হতে পারবো।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, উত্তম বর্মনের পরিবার সূত্রে আমরা জেনেছি, উত্তম গত ৩/৪ মাস ধরে এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু অবস্থায় ছিলেন। এদিকে এই দম্পতির লাশ উদ্ধারের পর এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। তবে থানা পুলিশ বলছে, তারা ঐ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

শেয়ার করুন