ইলিশ না থাকলে আপনাদের ব্র্যান্ডিং জেলা হারিয়ে যাবে : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দীন
মোঃ আলমগীর হোসেন পাটওয়ারী :
সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গাপূজার অষ্টমী দিনে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে পুরান বাজার দাস পাড়া পূজা উদযাপন কমিটির আয়োজিত ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর পূজা মন্ডপ পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দীন, তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই শারদীয় দূর্গোউৎসবের শুভেচ্ছা জানান, এ সময় তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেবী দূর্গাপূজা পালন করে। আপনাদের এই ধর্মে গ্রন্থে বলে, দেবী দূর্গার সপ্তমী দিনে এ সময়ে আবির্তত হন। পৃথিবীতে যতো অন্যায়-অনাচার-অনিষ্ট আছে সবাইকে বিনাস করার জন্য মর্তলোকে আসেন ও বিজয়ী দশমীতে স্বর্গলোকে চলে যান। এই পৃথিবীতে ধর্মের প্রতি বিশ্বাসে হিন্দু ভাই-বোনরা পূজা প্রর্থনা করে, তার থেকে তারা ধর্ম চর্চা সম্পর্কে জানবে এবং বাকী আমরা যারা আছি, আপনাদের এই উৎসব, আমাদের জন্য সকলের উৎসব। এখানে আমরা ধর্ম চর্চা করতে আসি নাই ধর্মীয় উৎসব করতে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশটা অস্প্রদায়িক সম্প্রতির বাংলাদেশ। যেখানে হিন্দু- মুসলিম-বৌদ্ধ- খৃষ্টান সবাই আমরা একসাথে আমাদের ধর্মচর্চা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্মচর্চা করে থাকি আর উৎসব গুলো আমরা সবাই মিলে করি। এবং রাস্ট্রের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসন, সহ যৌথ বাহিনী ও পূজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য কাজ করে থাকে যাতে কোনো পূজা মণ্ডপে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। তাছাড়া, জেলার প্রত্যেক পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা সেটআপ করা আছে। যেন দূর্বৃত্তরা দুষ্কৃতি করে পালিয় যেতে না পারে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মসজিদে যখন যাই ইমাম সাহেব, কুরআনের কথা বলেন, হাদিসের কথা বলেন, নামাজ – রোজার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, মাদক সহ সমাজের অনাচার আছে, তিনি সেই কথা বলেন। দেখেন এটাই হলো আমাদের ধর্ম। আজ যে পূজা উৎসব, আপনারা আপনাদের পূজা অর্চনা করবেন। ধর্মচেতনার মাধ্যমে কিন্তু সমাজ বির্নিমানে আমাদের ভূমিকা আছে। এই যে, পুরান বাজার দাস পাড়া পূজা মন্ডপ যে থিমের উপর করেছে, সমাজে কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ দিক। এটা পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটি চমৎকার উপস্থাপন করেছে। আপনারা যারা জেলে ভাইয়েরা স্বপ্ন দেখেন, গর্ব করেন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। এই ইলিশকে বাঁচাতে হবে। ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে হবে। ইলিশ সম্পদ যদি রক্ষা হয়। এই জেলার জেলে ভাইয়েরা বেশি উপকৃত হবে। অন্যান্য পূজা মন্ডপ থেকে এই পূজা মন্ডপ টা দেখে আমি মুগ্ধ বলার মতো নয়। এটা খুবই প্রশংসা দাবীদার। আপনারা যা চাইবেন তা আমি দিবো, কিন্তু ইলিশ সম্পদ বাঁচাতে হবে। আমরা যারা আছি, আমরা কি বিনেপয়সায় ইলিশ খেয়েছি? এই ইলিশ যদি রক্ষা পায়, উৎপাদন বাড়ে, চাঁদপুর জেলার মানুষজনের উপকৃত হবে। এই যে, ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে যদি ইলিশ না থাকে তাহলে আপনাদের ব্র্যান্ডিং জেলা থেকে হারিয়ে যাবে। আমাকে অনেক সাংবাদিক বলে, আমাদের এই জেলা এক সময় নদী বন্দর ছিলো কিন্তু সেখানে কোনো অহংকারের মতো কিছুই নাই।এই চাঁদপুর অহংকারের মতো বিষয় হলো ত্রি-নদীর মোহনায় – ডাকাতিয়া আর ইলিশ। তবে পদ্মা – মেঘনা আছে তা অনেক জেলায় প্রবাহিত। একমাত্র ব্র্যান্ডিং জেলা হলো ইলিশ নিয়ে। আর এই ইলিশ সম্পদ রক্ষা করার জন্য আপনাদের পূজা মন্ডপের ভূমিকা অনস্বীকার্য ও প্রশংসনীয়।
আরো শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, যৌথবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার এস.এম.এন জামিউল হিকমা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ মালাকার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন চন্দ্র সাহা, চাঁদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল চন্দ্র সাহা সহ সকল ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন।
পুরান বাজার দাস পাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র দাস সঞ্চালনা শেষে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন অতিথিবৃন্দ।