চাঁদপুরে এসএসসির ফলাফল বিপর্যয়

জেলার স্কুলে পাসের হার ৫৫.৯২, জিপিএ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৫ শিক্ষার্থী
মাদ্রাসায় পাসের হার ৬৪.৫৯, জিপিএ ফাইভ ৮২ ॥ ভোকেশনালে ৭৫.৪৫%, জিপিএ৫ পেয়েছে ৪৮ জন


ইব্রাহীম রনি :
চাঁদপুরে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮৫টি স্কুলের ২৬ হাজার ৬৪৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৩ জন। শতকরা পাসের হার ৫৫.৯২ শতাংশ। এর মধ্যে জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৫ জন পরীক্ষার্থী। এক বছরের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০২৪ সালের চেয়ে ২০২৫ সালে চাঁদপুর জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে ২৭.৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেক। ফলাফলের এমন বিপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা গেছে।
এদিকে এ বছর জেলার ৮ উপজেলার ১৯৯টি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭ হাজার ৩৩১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৫জন। পাসের হার ৬৪.৫৯%। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৮২জন।
এছাড়া এসএসসি (ভোকেশনাল) থেকে জেলার ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৬৭৮জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১ হাজার ২৬৬জন। পাসের হার ৭৫.৪৫%। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৪৮জন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫০টি স্কুল থেকে ৫ হাজার ৩৪ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ৩ হাজার ১৪৫ জন। পাসের হার ৬২.৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫৮ জন পরীক্ষার্থী।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪৭টি স্কুল থেকে ৩ হাজার ৫৭৬ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১ হাজার ৯১২ জন। পাসের হার ৫৩.৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০৫ জন পরীক্ষার্থী।
কচুয়া উপজেলার ৪০টি স্কুল থেকে ৩ হাজার ১৭৬ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১ হাজার ৪০৩ জন। পাসের হার ৪৪.১৮ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০০ জন পরীক্ষার্থী।
শাহরাস্তি উপজেলার ৩৪টি স্কুল থেকে ২ হাজার ৯১০ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১ হাজার ৭১৬ জন। পাসের হার ৫৮.৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৫ জন পরীক্ষার্থী।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ২৯টি স্কুল থেকে ২ হাজার ৩১৬ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১ হাজার ২৯৯ জন। পাসের হার ৫৬.০৯ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৮ জন পরীক্ষার্থী।
মতলব উত্তর উপজেলার ৩৯টি স্কুল থেকে ৩ হাজার ৯৫১ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১ হাজার ৯৯০ জন। পাসের হার ৫০.৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৭ জন পরীক্ষার্থী।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩৩টি স্কুল থেকে ২ হাজার ৯৭৩ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ২ হাজার ৪ জন। পাসের হার ৬৭.৪১ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৫ জন পরীক্ষার্থী।
হাইমচর উপজেলার ১৩টি স্কুল থেকে ৭১৩ জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ৩১৪ জন। পাসের হার ৪৪.০৪ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ জন পরীক্ষার্থী।
ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে হাজীগঞ্জ উপজেলা। হাজীগঞ্জ এবার পাসের হার ৬৭.৪১ শতাংশ। ৬২.৪৮ শতাংশ পাস করায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলা এবং ৫৮.৯৭ শতাংশ পাস নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শাহরাস্তি উপজেলা।
এদিকে জেলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ৩৫৮ এ প্লাস নিয়ে শীর্ষে রয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলা, ২০৫ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ায় জেলায় দ্বিতীয় স্থানে হাজীগঞ্জ উপজেলা এবং ১২৫ জিপিএ-৫ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শাহরাস্তি উপজেলা।
উল্লেখ্য, ২০২২ সাল, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হারে কুমিল্লা বোর্ডে প্রথম হয়েছিল চাঁদপুর।
২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮৪টি স্কুলের ২৬ হাজার ৬২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয় ২২ হাজার ৬৮৬ জন। শতকরা পাসের হার ছিল ৮৫.২১ শতাংশ। এর মধ্যে জেলায় জিপিএ-৫ পায় ১ হাজার ৮৮৭ জন পরীক্ষার্থী।
২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮৪টি স্কুলের ২৭ হাজার ২১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয় ২২ হাজার ৬৭৩ জন। শতকরা পাসের হার ৮৩.৩২ শতাংশ। এর মধ্যে জেলায় জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ২৬ জন পরীক্ষার্থী। গত বছরও এসএসসিতে বোর্ডের ৬টি জেলার মধ্যে পাসের হারে ৮৩.৩২ শতাংশ কৃতকার্য হওয়ায় প্রথম স্থানে থাকে চাঁদপুর জেলা।

শেয়ার করুন