চাঁদপুরে দুদকের গণশুনানিতে ৬৬ অভিযোগ, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন ও সমাধানের নির্দেশ

যারা নির্ভয়ে কথা বলেছেন তাদেরকে কোনভাবেই হেনস্তা করা যাবে না : দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন

জেলা প্রশাসন নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করছে : ডিসি কামরুল হাসান

ইব্রাহীম রনি :

চাঁদপুরে দুদকের গণশুনানিতে স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষা, ভূমি, পরিবেশ অধিপ্তর, রেজিস্ট্রি অফিস, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকারসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, সেবা না দেওয়া, হয়রানি করাসহ বিভিন্ন ধরনের ৬৬টি অভিযোগের শুনানি হয়েছে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই তিন দিন থেকে দুই মাসের মধ্যে দুদক, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু অভিযোগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের কথাও বলা হয়েছে।
বুধবার (১২ জুন) বিকেলে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত গণশুনানি শেষে এ তথ্য জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

দুদক সচিব বলেন, যারা সেবা দিচ্ছি এবং যারা সেবা নিচ্ছি সকলকেই সচেতন হতে হবে। আজকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দুপক্ষের কথা শুনেছি। কে কখন, কার কাছ থেকে ঘুষ চেয়েছেন? কিভাবে হয়রানির করেছেন, সে কথাগুলো এখানে নির্ভয়ে বলেছেন। এই নির্ভয়ে বলার একটি জায়গা হলো গণশুনানি। যারা এখানে নির্ভয়ে কথা বলেছেন তাদেরকে কোনভাবেই হেনস্তা করা যাবে না। তারা যেন সম্মানের সাথে সেবা পান। সেবা দাতা এবং সেবা গ্রহীতা কেউ কারো প্রতি যেন শত্রুমূলক আচরণ না থাকে এটি আমার প্রত্যাশা থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা এ গণশুনানিতে ৪৩টি দপ্তরের সাথে আমরা বসেছি এবং ৬৬টি অভিযোগ সম্পর্কে আমরা শুনেছি। প্রতিটি অভিযোগই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে শুনেছি। অভিযোগের কয়েকটি তাৎক্ষণিক আমরা রেজাল্ট দিয়েছি। কোন কোন অভিযোগের প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে আবার কিছু অভিযোগের প্রতিবেদন একমাসের মধ্যে দিতে বলেছি। এছাড়া গুরুতর কিছু অভিযোগ যেগুলো অধিকতর অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের যে যাচাই-বাছাই কমিটি রয়েছে সেই কমিটির কাছে প্রেরণ করার জন্য সুপারিশ করেছি।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি শব্দটি নেতিবাচক শব্দ। দুর্নীতি যারা করে কেউ কি তাদের ভালোবাসে, পছন্দ করে? কখনোই না। দুর্নীতির এই করালগ্রাস থেকে আমরা সবাইকে মুক্ত করতে পারি, একটি শুদ্ধ আচার পরিচালনা করতে পারি- এই ্আশাবাদ আমি ব্যক্ত করছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুদক আইনে দমনের চেয়ে প্রতিরোধের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, প্রতিরোধের জন্যই বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলায় কমিটি রয়েছে। দুর্নীতি রোধের জন্য আমাদের এনফোর্সমেন্ট কাজ করছে। আমাদের ফাঁদ কার্যক্রম চলে এবং কিছু জায়গায় এর সুফলও পাওয়া গেছে। যারা ঘুষ দিচ্ছে এবং নিচ্ছে উভয়পক্ষকে ধরা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, দুদকের কার্যক্রমের সুফল আমরা পাচ্ছি। ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের কাছে যত অভিযোগ দেখবেন, আস্তে আস্তে যদি ক্রমান্বয়ে কমে আসে তখন বুঝবেন দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের কার্যক্রমগুলো কাজ করছে। আমরা দেখছি, দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগের সংখ্যা কমে আসছে।
গণশুনানিতে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভাগীয় কার্যালয়, চট্টগ্রাম এর পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার), জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, সাধারণ নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন।
এদিকে জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, দুর্নীতির প্রতিকারের পাশাপাশি এর প্রতিরোধও করতে হবে। অনুসন্ধান/তদন্ত করে মামলার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করে দুদক দুর্নীতির প্রতিকার নিশ্চিত করছে। আর জেলা প্রশাসন নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে করে যাচ্ছে। যেমন-দুর্নীতি যেন না হয় সেজন্য প্রচার করা, জনগণের প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে সিটিজেন চার্টার এর মাধ্যমে তাদের অবগত করা, নাগরিকদেরকে প্রদেয় বিভিন্ন সেবার মান উন্নত করা, অফিসে দুর্নীতি বিরোধী কর্মশালা আয়োজন, সেবা প্রত্যাশী নাগরিক এবং সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়ন করা ইত্যাদি।

 

শেয়ার করুন