ডাকসু নির্বাচনে চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের সাফল্য, হলে ৬ জনেই সম্পাদকীয় পদে


চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ চাঁদপুর জেলার ৮ শিক্ষার্থী হল সংসেদের বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিদের বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তারা জয়ের মালা পড়েছে। বিজয়ী ৮ জনের মধ্যে ৬ জনই সম্পাদকীয় পদে এবং ২ জন সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের খবরে জেলার সর্বত্র বইছে আনন্দ। কারণ বিগত ডাকসুর কেন্দ্রীয় হল সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের এতোজন জয় পাননি। জানা গেছে, এই আটজনের বেশির ভাগই তাদের মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন চাঁদপুরেই। এদিকে জয় পাওয়া প্রতিনিধিরা নিজেদের অনুভূতি এবং আগামীর কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
হাজীগঞ্জের মেয়ে মাহিয়া বিনতে মামুন আরবি বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি রোকেয়া হল সংসদে সাহিত্য সম্পাদক পদে ১২০৭ ভোট পেয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, বহু বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। আমি জীবনে প্রথমবার ভোট দিয়েছি, প্রার্থী হয়েছি এবং জিতেও এসেছি। তাই নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ, অফুরন্ত রোমাঞ্চকর।” আগামীর পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের কাছে যে অঙ্গীকারগুলো করেছিলাম, তা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গেও একসাথে হলকে সাহিত্যমুখী করে তুলব।
একই পদে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক পদে মতলব দক্ষিণের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম লুবনা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি এ পদে ৭৫৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে এসেছে। আবাসিক আপুদের সমর্থন নিয়ে নিশ্চিত থাকলেও অনাবাসিক আপুদের থেকেও যে এতটা সমর্থন পাবো, তা ভাবিনি।তিনি আরও বলেন, সাহিত্য ক্লাব গঠন, ম্যাগাজিন প্রকাশ, অভিজ্ঞ লেখকদের নিয়ে গাইডলাইন সেশন আয়োজন এবং সাহিত্য কর্ণার স্থাপন আমার প্রধান লক্ষ্য।
হাজীগঞ্জের আরেক শিক্ষার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ (আরবি বিভাগ, ২০২০-২১ সেশন) ৬৪৮ ভোট পেয়ে বিজয় একাত্তর হল সংসদে সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি সত্যিই রোমাঞ্চকর। কয়েকদিন টানা কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। আগামীর পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা, বহুভাষিক সাহিত্যচর্চা আয়োজন করব। সবাইকে নিয়ে সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
মতলব দক্ষিণের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক পদে ৫১৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তিনি বলেন, ডাকসুর আগেও সাহিত্যচর্চায় কাজ করেছি। এবার নির্বাচিত হয়ে প্যাশনকে কাজে লাগাতে আরও অনুপ্রাণিত বোধ করছি। তিনি আরো জানান, হলে নতুন বুকশেলফ স্থাপন, সাহিত্য কর্নার চালু এবং একটি পডকাস্ট শুরু করব।
চাঁদপুর সদরের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম (আইন বিভাগ, ২০১৯-২০ সেশন) ৩৬৬ ভোটে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদে পাঠকক্ষ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, অংশগ্রহণের সাথেই বিজয় এসেছে, এটা সত্যিই আনন্দের। আমার ছাত্রসংগঠন সর্বক্ষণ পাশে ছিল, এজন্য কৃতজ্ঞ। তার পরিকল্পনায় রয়েছে— পাঠকক্ষ সম্প্রসারণ, ওয়াইফাই, লকার, ওয়াশরুম ব্যবস্থা, অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি এবং দেশি-বিদেশি ম্যাগাজিন সংরক্ষণ।
একই পদে শামসুন নাহার হল সংসদের পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে শাহরাস্তির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ২০২১-২২ সেশন) ১১৭৯ ভোটে জয়লাভ করেছেন।
চাঁদপুর সদরের আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল তালুকদার (ফলিত গণিত, ২০২২-২৩ সেশন) ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদের কার্যকরী সদস্য পদে ৪৩৩ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। চাঁদপুর সদরের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন (সমাজকল্যাণ বিভাগ, ২০২৩-২৪ সেশন) ৫৪৫ ভোট পেয়ে শেখ মুজিব হল সংসদের কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব হল সংসদে কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আমি গর্বিত। এটি আমার জন্য এক ধরনের আমানত।” তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন, ক্লাবগুলোর উন্নয়ন এবং# কর্মশালা আয়োজন করব। নিঃস্বার্থভাবে হলের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করব।

শেয়ার করুন