ডাক্তারা নিজের চেম্বারের চেয়ে হাসপাতালে রোগীর প্রতি মনোযোগ দিন : ডিসি চাঁদপুর
চাঁদপুরে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক
ডাক্তারা নিজের চেম্বারের চেয়ে হাসপাতালে রোগীর প্রতি মনোযোগ দিন :
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৭ আগস্ট ) সকালে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সভার সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রায় চিকিৎসক থাকে না। এতে আগত রোগীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। যে ডাক্তারদের ও নার্সের তালিকা আমাকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিয়েছেন তাতে স্বল্পতা থাকলেও তিন শিফিটের মাঝে ভাগ করে দিলেও মোটামুটি ভাবে আপাতত চলে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটা হাসপাতালে জনবলের জন্য আপনারা হা-হুতাশ না করলেও চলবে। প্রতি শিফটে ১২-১৩ জন ডাক্তার পাওয়া গেলে সেটাই অনেক।
তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমি বলবো আপনারা ডাক্তারদের দায়িত্বে আরো সচেতন হতে বলেন। নিজের চেম্বারে রোগী দেখার উপর জোর দিতে গিয়ে তার যেন তাদের কর্মস্থলের দায়িত্ব না ভুলে যায়। হাসপাতালের পরীক্ষা নিরীক্ষা যেখানে হয় সেখানে অনেকসময় টেকনিশিয়ানকে পাওয়া যায় না। তাদের নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাওয়া যায়। এরকম আমার কাছে বেশ অভিযোগ আছে। আমি তাদেরকে এই সভার মাধ্যমে সতর্ক করে দিচ্ছি। আমাদের এই হাসপাতাল অচিরেই তার ধারণক্ষমতা বাড়াতে চলেছে। আমরা নতুন বিল্ডিং করার পরিকল্পনা করতে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জন্য আমরা কাজও খুব তাড়াতাড়ি শুরু করবো। এই বর্ষায় সাপের উপদ্রব বাড়তে পারে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপের কামড়ের চিকিৎসা অর্থাৎ এন্টি ভেনম ঔষধ পর্যাপ্ত আছে কিনা তা উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা দেখবেন। সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো সবসময় তৈরি থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমাদের সদর পৌরসভা আসলে বর্তমানে খুব গরীব। তাদের আসলে বড় কাজ হাতে নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। তবে আমি পৌরসভাকে বলবো যেখানে যেখানে বর্ষায় রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হবে সেখানে রাস্তায় গর্ত দেখা দিচ্ছে। আপনারা ইট সুড়কি দিয়ে সে জায়গাগুলো ভরাট করে ফেলুন। কারণ তা নাহলে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলার যে কাজগুলো রয়েছে সে গুলো আপনারা শেষ করুন। কারণ কাজ যদি অর্ধাবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে সেই কাজের স্থায়িত্ব কমে যায়। পরে আবার সে কাজ করতে হয়। এই কাজ আপনারা তাড়াতাড়ি শেষ করলে পরবর্তী কাজ আরম্ভ করতে পারবেন। এতে আপনাদের কাজে গতি আসবে। আমি একটা কাজ হাতে নিতে চাই। আমাদের সব অধিদপ্তরের স্টাফদের অনেকেই দূর থেকে আসেন অথবা পরিবার ছাড়া থাকেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সব দপ্তরের সবাই যাতে একসাথে থাকতে পারে সেজন্য আমাকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে একটা প্রস্তাব দেন। আমি চিন্তা করে দেখলাম এটা যুগোপযোগী প্রস্তাব। আমরা জায়গা দেখছি। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমরা জায়গা পেয়ে যাবো। আমাদের গণপূর্ত অধিদপ্তর এ ব্যপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে আমরা মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক একটি কর্মশালা করেছিলাম। সেখানে শিক্ষার মান উন্নয়নে অনেক বিষয় উঠে এসেছে। সেখানে দেখলাম শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে আসতে অনীহা প্রকাশ। দেখুন আপনারা যেখান থেকে সরকারের বেতন ভাতা উপভোগ করেন সেখানে আসতে আপনাদের ইচ্ছা করে না। আপনাদের কোচিং সেন্টারে মন পড়ে থাকে। আমি জেলা শিক্ষা অফিসারকে বলবো আপনি এগুলোর খোঁজ রাখেন। অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা করেন। আমি এ ব্যপারে পরবর্তীকালে ব্যবস্থা অবশ্যই নিবো।
উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ রকিব উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: এরশাদ উদ্দিন (সার্বিক) ও পৌর প্রশাসক মো: গোলাম জাকারিয়া, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুরে আলম দ্বীন, এনএসআইয়ের উপ পরিচালক আবু আবদুল্লাহ, সরকারি মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. ইকবালুর রহমান, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা মোহাম্মদ ফয়সাল, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবির, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আহমেদ টিটো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, মেঘনা ধনাগোদা পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সেলিম শাহেদ, জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আলম শরীফ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জোতির্ময় ভৌমিক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম, জেলা মৎস কর্মকর্তা মো: শাহজাহান কবীরসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।