দুদকের মামলায় যে কোনো সময় গ্রেফতার সেলিম খান

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য
চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
যে-কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন চাঁদপুরের সেলিম খান। নির্ধারিত সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। জানা গেছে, তিনি একটি ডাক্তারি সনদ নিয়ে ১৪ দিন বাইরে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে তার কোনো চেষ্টাই সফল হবে না বলে সূত্র জানিয়েছে। খবর ঢাকা টাইমসের।
৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আত্মসমর্পণের শেষ দিন ছিল ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার। কিন্তু ওইদিন তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ঘোরাফেরা করলেও আত্মসর্ম্পণ করেননি। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ওইদিন ছিলেন না। তবে ওই আদালতে একজন ভারপ্রাপ্ত বিচারক ছিলেন। কিš ‘ সেলিম খান তার আদালতেও আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেননি।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী সেলিম খানকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিন্তু বিচারক না থাকায় গত বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে গিয়েও আত্মসমর্পণ না করে ফিরে আসেন বলে জানা গেছে। এরপর রবিবারও তিনি আদালত পাড়ায় ঘোরাফেরা করেন। কিন্তু আত্মসমর্পণ করেননি।
এ ব্যাপারে দুদকের আইনজীবী আবদুস সালাম সোমবার বলেন, ‘তিনি উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা হবে। তিনি অবশ্যই গ্রেফতার হবেন।’
সেলিম খান একটি ডাক্তারি সনদ নিয়ে ১৪ দিন বাইরে থাকার অপচেষ্টা করছেন- এমন প্রশ্নে এই আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব করার আর কোনো সুযোগ নেই।’
দুদকের আরেক আইনজীবী বলেন, ‘সেলিম খানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে ওই মামলায় তাকে অবশ্যই জেলে যেতে হবে। তিনি আত্মসমর্পণ করলেও তাকে জেলে যেতে হবে। হয়ত সেটা আঁচ করতে পেরেই সেলিম খান গড়িমসি করেছেন।’
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ রবিবার বলেন, ‘যেহেতু তিনি আজকে (রবিবার) আত্মসমর্পণ করেননি, তাই তার জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা হয়ে যাবে।’
তিনি জামিন নেওয়ার জন্য ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘এমন কথা আমার জানা নেই।’ ১৪ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত সেলিম খানকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের বেঁধে দেয়া তিন সপ্তাহের ডেডলাইন শেষ হয়েছে রবিবার।
৩৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও প্রায় ৬৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে গত ১ আগস্ট সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলার পর সেলিম খানের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সেলিম খান জাল নথি ও ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ভিত্তিহীন রিট করেন আদালতে। এর মাধ্যমে সময় নষ্ট করায় গত ৯ জুন সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সেলিম খান জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঘৃণিত কাজ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি একজন ঘৃণিত ব্যক্তি।
দুদকের অনুসন্ধানে সেলিম খানের স্থাবর-অস্থাবর বহু সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৪.২১ একর কৃষি ও অকৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০ তলা বাড়ি, ঢাকার কাকরাইলে ৪ তলা বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট যার আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে- দুটি জিপ গাড়ি, চারটি ড্রেজার, একটি শটগান, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র বাবদ তিন কোটি তিন লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে দুই কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকাসহ তার অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।
এছাড়া রয়েছে ল²ীপুরে কারুকার্য খঁচিত প্রাসাদোপম বাড়ি, ল²ীপুর বাজারে সিনেবাজ লিমিটেড মার্কেট, চাঁদপুরের কালীবাড়ি মোড়ে চার কোটি টাকায় কেনা সুভাষ চন্দ্র রায়ের বাড়ি, শহরের টাউন হল মার্কেটের ৪, ৫ এবং ৬ তলা লিজ, ইচলি চুন ফ্যাক্টরির পাশে মেয়ের নামে ৭০ শতাংশ জায়গা, ল²ীপুর মৃধাবাড়ির সামনে নদীর পাড়ে প্রায় ২০০ একর জায়গা বøক ফেলে দখলসহ আরও অনেক সম্পদ। একই সঙ্গে সেলিম খানের রয়েছে দুটি লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও শটগান।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হলেও সেলিম খান বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। কোটি টাকার ল্যান্ড ক্রুজার জিপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মডেলের একাধিক গাড়ি রয়েছে তার। ছেলে শান্ত খান, মেয়ে পিংকি এবং মেয়ের জামাইসহ পরিবারের সদস্যদের সবাই বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন।
সেলিম খান নির্মাণ করেছেন ৮০টির মতো সিনেমা। ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায় জড়িত যে ২০০ জনের তালিকা নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে, সেখানেও সেলিম খানের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে সেলিম খানের ছেলে চলচ্চিত্র অভিনেতা শান্ত খানের প্রায় ১৫ কোটি টাকার ‘সন্দেহজনক’ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। এই সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস দেখাতে না পারায় সন্ধানে নামে সংস্থাটি। ১৮ আগস্ট অভিযোগের সত্যতা জানতে দেশি-বিদেশি ৫৮টি ব্যাংককে চিঠি পাঠায় দুদক। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান হওয়ার আগেও সেলিম খানের জীবন-যাপন ছিল খুবই সাধারণ। চেয়ারম্যান হয়েই পাল্টে যেতে থাকে তার আর্থিক অবস্থা। সেলিম খানের ছোট ভাই বুরহান উদ্দিন টেলু একজন দোকানদার। এছাড়া সেলিম খানের বড় মেয়ের জামাইও স্থানীয় একজন মুদি দোকানদার। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পর সেলিম খান সিনেমায় অর্থ লগ্নি করতে থাকেন। এক সময় টাকার জোরে ছেলেকে নায়কও বানান।
দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও বিতর্কিত কর্মকাÐের অভিযোগে ৪ জুন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক সভায় সর্বসম্মতিতে সেলিম খানকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আত্মসমর্পণের বিষয়ে জানতে সেলিম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন